
সম্প্রতি গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করা সুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, আটক থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে—ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, হাসি-ঠাট্টা করেছে এবং প্রয়োজনীয় খাবার না দিয়ে অনাহারে থাকতে বাধ্য করেছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে, তৃষ্ণায় তারা বাধ্য হয়ে শৌচাগারের পানি পান করেছেন।
অধিকারকর্মীরা আরও অভিযোগ করেন, তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটুর ওপর বসিয়ে রাখা হয়, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং তিন দিন পর্যন্ত কোনো খাবার দেয়া হয়নি।
ফ্লোটিলার এক যাত্রী ইতালীয় সাংবাদিক লরেনজো ডি’আগোস্তিনো বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী আমার অর্থ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র চুরি করেছে।’ আটকের পর গত শনিবার তাকে ইসরায়েল থেকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নামার পর তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনারা বন্দীদের দিকে বন্দুকের লেজার লাইট তাক করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আটক কর্মীদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দিয়েও ভয় দেখানো হয়েছে।’
এর আগে গাজায় অবরোধ ভাঙতে এবং গাজাবাসীদের ত্রাণ সরবরাহ করতে সমুদ্রে নৌকায় করে গাজার উদ্দেশে যাত্রা করেন শত শত অধিকারকর্মী। পরে গাজার কাছাকাছি গেলে গত বুধ থেকে শুক্রবারের মধ্যে ফ্লোটিলা নৌবহরে থাকা প্রায় ৪৫০ জনকে আটক করা হয়। পরে ধাপে ধাপে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
রোববার (৫ অক্টোবর) ইতালির রোমে ফিরে অধিকারকর্মী চেজারে তোফানি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভয়ংকর ব্যবহার করা হয়েছে।’
ইতালির ইসলামিক কমিউনিটিজ ইউনিয়নের সভাপতি ইয়াসিন লাফরাম বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করেছে তারা। আমাদের ওপর অস্ত্রও তাক করে ছিল। নিজেদের গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করা রাষ্ট্রের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’
ইতালীয় সাংবাদিক সাভেরিও তোমাসি এপিকে বলেন, ‘আটক অধিকারকর্মীদের ওষুধ দেননি ইসরায়েলি সেনারা এবং তাদের সঙ্গে বানরের মতো আচরণ করেছে তারা। প্রহরীরা আটক অধিকারকর্মীদের নিয়ে বিদ্রুপ ও হাসাহাসি করছিলেন।’
এছাড়া ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীদের খুবই নিষ্ঠুর আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন পাওলো ডি মোনটিস নামের আরেক অধিকারকর্মী। তিনি বলেন, ‘সব সময় মাথা নত রাখতে হতো। একজন লোক এসে আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে মাথার পেছনে থাপ্পড় মারল। তারা আমাদের বাধ্য করেছে হাঁটুতে ভর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে।’
মালয়েশিয়ার অভিনেত্রী ও গায়িকা দুই বোন হেলিজা হেলমি ও হাজওয়ানি হেলমিও ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ‘বর্বর’ ও ‘নিষ্ঠুর’ আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
ফ্লোটিলা থেকে আটক হওয়ার পর ছাড়া পাওয়া অধিকারকর্মীরা জলবায়ুবিষয়ক আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, গ্রেটাকে মাটিতে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয়েছে এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয়েছে। এছাড়া তাকে ব্যবহার করা হয়েছে মিথ্যা প্রচারণার কাজেও।