
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে মিশরে পাঠিয়েছেন।
শনিবার (৪ অক্টোবর) এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির ‘খুব কাছাকাছি’ আছে এবং তিনি আসন্ন কয়েক দিনের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করতে চান।
এর একদিন আগে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস ঘোষণা করে যে তারা ট্রাম্পের দুই বছরব্যাপী আলোচনায় তৈরি যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা অনুযায়ী জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রক্রিয়ার কারিগরি বিবরণ—বিশেষ করে জিম্মি বিনিময় ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি—চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন দূতরা মিশর সফরে গেছেন। মিশরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, সোমবার ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদলও যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবে।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও শনিবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় বহু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-তুফাহ পাড়ায় এক বাড়িতে বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অন্তত ২০ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানায়।
ওয়াফার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনের বেলায় গাজা সিটির এক বেকারির কাছে ড্রোন হামলায় বহু মানুষ হতাহত হন। এছাড়া, গাজা সিটির অন্যান্য এলাকা এবং ইসরায়েল ঘোষিত ‘নিরাপদ অঞ্চল’ আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুতদের এক তাবুতে পৃথক হামলায় দুই শিশুসহ কমপক্ষে ছয়জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দখলদার বাহিনীর অব্যাহত বোমাবর্ষণ ও গণহত্যা প্রমাণ করে যে, নেতানিয়াহুর “সামরিক অভিযান হ্রাসের” দাবি আসলে মিথ্যা প্রচার।’
তবে এর আগে ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছিল, গাজায় সামরিক অভিযান ‘সর্বনিম্ন পর্যায়ে’ নামিয়ে আনা হবে এবং সৈন্যরা কেবল প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেবে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে ইসরায়েল কর্তৃক ‘অস্থায়ীভাবে বোমা হামলা বন্ধ’ করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানান। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা আশা করছি সুক্কত ছুটির (সোমবার থেকে শুরু) আগেই আমাদের সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনতে পারব।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে—হয় ট্রাম্পের পরিকল্পনার মাধ্যমে কূটনৈতিকভাবে, নয়তো আমাদের সামরিক পদক্ষেপে।’
হামাস শুক্রবার জানায়, ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার কয়েকটি মূল বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছে—যার মধ্যে যুদ্ধ সমাপ্তি, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত। তবে, সংগঠনটি নিরস্ত্রীকরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত রেখেছে।
ট্রাম্প এক পোস্টে সতর্ক করে বলেন, হামাসের পক্ষ থেকে ‘বিলম্ব বা অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না’ এবং আলোচনায় গতি না এলে ‘সব চুক্তি বাতিল’ হবে। পরে তিনি জানান, ইসরায়েল ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রত্যাহার সীমারেখাতে সম্মত হয়েছে এবং হামাস রাজি হলেই যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় কার্যকর হবে।
অ্যাক্সিওসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এখন খুব কাছাকাছি। আমি নেতানিয়াহুকে বলেছি— এটা আপনার বিজয়ের সুযোগ। তিনি এতে সম্মত হয়েছেন, এবং তার এখন আর পিছু হটার সুযোগ নেই। আমার সঙ্গে থাকলে তাকে দৃঢ় থাকতে হবে।’
ট্রাম্প তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকেও প্রশংসা করে বলেন, তিনি জিম্মি মুক্তি বিষয়ে হামাসকে রাজি করাতে ‘খুব সহায়ক ভূমিকা’ পালন করেছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ৬৭,০৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বেসামরিক নাগরিক।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান