
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আনুষ্ঠানিকভাবে আক্রমণ চালায় রাশিয়া। তার মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় ১ মার্চ বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এবং ইউরোপ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা যৌথ বিবৃতিতে সব আন্তর্জাতিক এবং ক্লাব পর্যায়ে সব প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফুটবল থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করে।
তবে অন্যদিকে দশকের পর দশক ধরে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে আসছে দখলদার ইসরাইয়েলি বাহিনী। এই গণহত্যা থেকে বাদ যাননি দেশের জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদরাও। আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ ইসরায়েল ফিলিস্তিনির গাজার গণহত্যা চালিয়েছে বলে কোনো শিকার করেনি। তবে গেল মাসে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে উঠে এসেছে। এরপর থেকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোরালোভাবে অবস্থান নেয় ইসরায়েলের বিপক্ষে। যার প্রভাব জোরালোভাবে পড়েছে ফুটবল অঙ্গনে। আগে থেকে ঝুলতে থাকা স্ফুলিঙ্গ রূপ নিয়েছে জ্বলন্ত অগ্নিশিখায়।
স্পেন, ইতালি, ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী দেশগুলো ইউরোপ ফুটবল থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে। তবে উয়েফা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করছে মধ্যপ্রাচের দেশ কাতার। কারণ, উয়েফা সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য করে কাতারের সঙ্গে। উয়েফার টুর্নামেন্টগুলোর সম্প্রচার স্বত্ব এবং স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই কাতারভিত্তিক। কাতারের এমন চাপের ফলে গেল মাসে উয়েফা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে বৈঠকে বসেছেন সংস্থাটির শীষ কর্তারা।
অন্যদিকে উয়েফার মতো ফিফার ওপরও সমান চাপ আসছে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করতে। তবে দেশটিকে সরাসরি নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে অবস্থিত ফিফার প্রধান দপ্তরে কাউন্সিলর সভায় সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো গাজায় চলমান আগ্রসনকে ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জানান, ফিফা কেবল শান্তি এবং ঐক্যের ডাক দিতে পারে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না।
এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজ বিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান বিভিন্ন সংঘাতে যারা ভুগছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা এবং ফুটবল এই মুহূর্তে যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে পারে তা হলো শান্তি ও ঐক্য। ফিফা ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে পারে না, তবে এটি তার ঐক্যবদ্ধ, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক এবং মানবিক মূল্যবোধকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব জুড়ে ফুটবলকে প্রচার করতে পারে এবং অবশ্যই তা করতে হবে।’
তবে একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ক্রীড়াঙ্গন থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার যে কোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও ফিফা প্রেসিডেন্ট জানিয়েছে, তিনি ফিলিস্তিনি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) প্রেসিডেন্ট জিব্রিল রাজৌবের সঙ্গে দেখা করেছেন। ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে ইনফান্তিনো লিখেছেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি রাজৌব এবং পিএফএ-এর এই সময়ে তাদের স্থিতিস্থাপকতার জন্য প্রশংসা করি এবং বিভক্ত বিশ্বে মানুষকে একত্রিত করার জন্য ফুটবলের শক্তি ব্যবহার করার জন্য ফিফার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করতে উয়েফার কোর্টে বল ঠেলে দিলো ফিফা। বুধবার লন্ডনে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত এমন ব্যবসায়ীদের সম্মেলনে ফিফা ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কনমেবলের সভাপতি ভিক্টর মন্টাগলিয়ানি বলেন, ‘ইজরাইল উয়েফার সদস্য। এই বিষয়ে যেখানে সিদ্ধান্ত কেবল মাত্র উয়েফাই নিবে।’
অথচ আগামী ১১ অক্টোবর অসলোয় নরওয়ের বিপক্ষে এবং ১৪ অক্টোবর উদিনেতে ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ খেলবে ইসরাইল। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার মতো ইসরাইলকে ও ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয় নাকি, আগের মতোই সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করবে ফিফা এবং উয়েফা-সেটাই এখন দেখার বিষয়।