
বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার সাধারণ জনগণের মধ্যে এখনো তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও ২০২৪ সালে নতুন করে ১ হাজার ৪৩৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। একই বছরে এইডস-সম্পর্কিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৯৫ জনের, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম (এনএসপি) এবং ইউএনএআইডিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে দেশে মোট ১২ হাজার ৪২২ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী (পিএলএইচআইভি) শনাক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২ হাজার ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার ৮৬৩ জন এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ বসবাস করছেন।
সম্প্রতি কী-পপুলেশন (গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী) এবং পিএলএইচআইভি (এইচআইভি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের) জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক পরিষেবা বিষয়ক জাতীয় কর্মশালায় এ তথ্য জানা যায়। স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস), ইউএনএইডস এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে মহাখালীর ডিজিএইচএস-এর অডিটোরিয়ামে এই কর্মশালাটি হয়।
কর্মশালায় শিশু সুরক্ষা এবং সামাজিক পরিষেবা ব্যবস্থার মধ্যে এইচআইভি প্রতিরোধ ও যত্নের বিষয়গুলি কীভাবে একীভূত করা যায়, তা তুলে ধরা হয়। এতে ইউএনএইডস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সাইমা খান ও ডিজিএইচএস-এর জাতীয় এইডস/এসটিডি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি ডিরেক্টর ড. জুবাইদা নাসরীন যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। ডিজিএইচএস-এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ড. শেখ সাইদুল হক কর্মশালার উদ্বোধন করেন। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনএইডস-এর কনসালটেন্ট ফুরকান হোসেইন ও লুৎফুন্নাহার শিমুল।
এসময় ইউনিসেফ এবং ইউএনএইডস-এর যৌথভাবে প্রকাশিত বই ‘পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রামিং এপ্রোচ: লিংকিং এইচআইভি প্রিভেনশেন উইথ হারমফুল প্রেকটিস প্রিভেনশন ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশে ক্ষতিকর অভ্যাস বন্ধের সাথে এইচআইভি প্রতিরোধকে যুক্ত করার নীতি ও কর্মসূচির পদ্ধতি)’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্তের হার এখনও ০.১ শতাংশের কম, যা খুব ভালো খবর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, ২০১০ সালের পর থেকে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মানে হলো, কিন্তু মানুষের মধ্যে এখনও বড় বিপদ রয়ে গেছে। এই বিপদ আসলে বাল্যবিবাহ, মেয়েদের উপর নির্যাতন (জিবিভি) এবং সুরক্ষার জনা সঠিক সেবা না পাওয়ার মতো বড় সামাজিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে জড়িত।
এ প্রসঙ্গে ইউনিসেফ বাংলাদেশ অফিসের কর্মকর্তা ও শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান, ডা. এলিসা ক্যালপোনা বলেন, ‘কিশোর-কিশোরী এবং তরুণরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। কারণ, এইচআইডি রোগটি বাল্যবিবাহ, মেয়েদের উপর সহিংসতা এবং সুরক্ষার অভাবের মতো সামাজিক সমস্যাগুলোর সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কারণে, ইউনিসেফ, ইউএনএইডস এবং বাংলাদেশ সরকার একসঙ্গে কাজ করছে- যাতে শিশুদের সুরক্ষার জন্য তৈরি ব্যবস্থার মধ্যেই এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার কাজ যুক্ত করা যায়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এই সেবাগুলো যেন সবার জন্য হয়, মানুষের কাছাকাছি পৌঁছায় এবং সবার অধিকার রক্ষা করে।’ তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন যে, সবচেয়ে বিপদে থাকা তরুণদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সেবাগুলো অবশ্যই গোপনীয়তা এবং মর্যাদা বজায় রেখে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনএইডস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সাইমা খান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এইডসকে জনস্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্ত করা। এর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে সেবা পৌঁছানোই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।”
কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ প্রকল্প (পিভিএইচপি)-এর মনিটরিং এক্সপার্ট মাহবুব হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ক্রীড়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) এস. আই. এম ফেরদৌস আলম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিশেষ শিক্ষা শাখার সহকারী পরিচালক মো. খালিদ সাইফুল্লাহ, এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের সিএসপিবি প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) জাতীয় প্রকল্প পরিচালক মো. সাদিকুল হক।
ইউনিসেফ এবং ইউএনএইডস দল কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ডিজিএইচএস-এর নেতৃত্বে চলা আন্তঃক্ষেত্রীয় সমন্বয় প্রচেষ্টায় সুরক্ষা-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহারিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। এই সমন্বিত কৌশলের লক্ষ্য হলো কলঙ্ক ও বৈষম্য কমানো, পরিষেবার ঘাটতি দূর করা, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে এইডস নির্মূল করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।