
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন ঘিরে নাটকীয়তার শেষ নেই। যে প্রার্থীরা কয়েক দিন আগেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিজেদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারাই আবার নতুন করে নির্বাচনকে ঘিরে প্রশ্ন তুলছেন। তাদের দাবি-বর্তমান প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হচ্ছে না, বাদ পড়া ও কাউন্সিলরশিপ বাতিল হওয়া সংগঠকদের আবার অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। ফলে মনে হচ্ছে, প্রার্থীরা নিজেরাই আত্মদ্বন্দ্বে ভুগছেন।
এ দিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এর আগে বিসিবি ঘেরাওয়ের হুমকিও এসেছিল। সবমিলিয়ে গতকাল বিসিবি চত্বরে বসেছিল পুলিশি পাহারা। আবার সবকিছু সমাধানের জন্য ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে আহ্বান জানিয়েছেন ক্লাব সংগঠকরা।
গেল বুধবার নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকা প্রকাশের আগেই হেভিওয়েট প্রার্থী তামিম ইকবালসহ ১৫ জন প্রার্থী সরে দাঁড়ান। তবুও তালিকায় বৈধ প্রার্থীদের নাম প্রকাশের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবু, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের মির্জা ইয়াসির আব্বাসরা গতকাল বিসিবিতে এসে নতুন করে দাবি তুলেছেন। তাদের দাবি-নির্বাচন পিছিয়ে নতুন তফশিল ঘোষণা করা হোক, প্রয়োজনে অ্যাডহক কমিটি করা হোক অথবা বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ আরও কিছুদিন বাড়ানো হোক।
রফিকুল ইসলাম বাবুর বক্তব্যে ফুটে উঠেছে কাউন্সিলরশিপ সংকট। তার মতে, ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ বাতিল হওয়ায় প্রায় ৩০০-৩৫০ ক্রিকেটারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এই খেলোয়াড়রা খেলবে কোথায়-এই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অর্থাৎ, শুধু প্রার্থী নয়, ক্লাবগুলোর ক্রিকেটারদের জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, যারা স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়িয়েছিলেন, তারা কেন আবার নতুন করে দাবি তুলছেন? এটি কী তাদের কৌশলগত ভুল ছিল, নাকি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ফল?
প্রত্যাহারকারী প্রার্থীদের দাবিগুলো আসলে এক ধরনের আত্মদ্বন্দ্বের প্রতিফলন হিসেবে সামনে এসেছে। একদিকে তারা নির্বাচনকে বর্জন করেছেন, অন্যদিকে আবার নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। এর মধ্যেও বিসিবি ভবনে গতকাল ছুটির দিনেও ছিল কড়া পুলিশি পাহারা। দুপুরে হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা আসছেন প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু বাস্তবে তারা দেখা করতে গিয়েছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে, যদিও সরকারি ছুটির কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
পরে গণমাধ্যমের সামনে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দীর্ঘদিনের সংগঠক ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়া রফিকুল ইসলাম বাবু বলেছেন, ‘এখন যে ভোটের তারিখ আছে সেটাকে নিয়মনীতির মধ্য দিয়ে পিছিয়ে বিষয়টার সমাধান করা যেতে পারে। রিশিডিউল করলে যারা যোগ্য আছেন কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাদ পড়েছেন বা কাউন্সিলরশিপ বাতিল হয়েছে, তারা এখানে আসতে পারবেন। তারা কাউন্সিলরশিপ বা মনোনয়ন দাখিলের একটা সুযোগ পাবেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি জানি না এটা সম্ভব কি না, তবে অ্যাডহক কমিটি করেও কিছুদিন চালানো যেতে পারে। ক্রিকেটের স্বার্থে সাম্প্রতিক সংকট উত্তরণের জন্য সেটা আমরা করতে পারি। এই দাবিগুলোই আমরা আমাদের অভিভাবক ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে জানাতে চাই। তিনি একটি যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন, যার মাধ্যমে ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। ক্রিকেট ক্রিকেটের জায়গায় থাকবে।’
নির্বাচনের মাঠে এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। ক্যাটাগরি-১ এ ৪টি আসনে ভোট হবে, ক্যাটাগরি-২ এ ১৬ জনের লড়াইয়ে ১২ জন নির্বাচিত হবেন এবং ক্যাটাগরি-৩ থেকে দুই জন প্রার্থীর এক জন পরিচালক হবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সোমবার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে হেভিওয়েট প্রার্থীরা সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সভাপতি পদপ্রার্থী তামিম ইকবালের প্রত্যাহার পরিস্থিতিকে ঘিরে দিয়েছে নতুন ধোঁয়াশা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিসিবি নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে মনোনয়ন বৈধ প্রার্থীরা মাঠে আছেন, অন্যদিকে প্রত্যাহারকারী প্রার্থীরা নতুন দাবিতে সরব হচ্ছেন। এই দ্বৈত অবস্থান আসলে তাদের নিজেদের আত্মদ্বন্দ্বকেই প্রকাশ করছে। এখন চোখ সবার ক্রীড়া উপদেষ্টার দিকে তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন এবং শেষ পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচন আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য আকারে মাঠে গড়ায়, সেটাই বড় প্রশ্ন।