
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচনে পরিচালক পদের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোট ৫১টি ফরম জমা পড়ে। এরপর গতকাল সোমবার প্রার্থীদের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই করে তিন জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তাদের প্রস্তাবকারী কিংবা সমর্থনকারীর স্বাক্ষরের সঙ্গে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের মনোনয়ন বৈধ হয়নি।
যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে একজন হলেন ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ও সাবেক বিসিবি পরিচালক এস এম আব্দুল্লাহ ফুয়াদ রেদুয়ান। তার মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় এই বিভাগ থেকে বাকি দুই প্রার্থী-সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবং কোচ ও ক্রিকেট সংগঠক নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ঢাকা বিভাগের তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন বাদ পড়ায় বাকি দুজনের জন্য আর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলো না। এতে করে কার্যত ঢাকা বিভাগ থেকে আগেভাগেই নির্বাচনের ফল নির্ধারিত হয়ে গেছে। কেবল বাকি বুলবুল ও ফাহিমের মনোনয়ন চূড়ান্ত বৈধতার অপেক্ষায়।
এই বিষয়ে গতকাল দৈনিক ইত্তেফাককে রেদুয়ান বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। যতক্ষণ পর্যন্ত তার মনোনয়ন বৈধ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি লড়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সাবেক এই পরিচালক জানিয়েছেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে সমর্থনকারী যদি সশরীরে এসে জানান, ফরমে তারই স্বাক্ষর রয়েছে, তখন আর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না। যিনি আমার কাউন্সিলর ফরমে স্বাক্ষর করেছেন, তিনিই মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেছেন। একই ব্যক্তির স্বাক্ষর। শুনানির সময়েই এটি পরিষ্কার হয়ে যাবে আশা করি। তবু কোনো সমস্যা হলে আমি আইনি লড়াইয়ে নামব।’
বাতিল হওয়া বাকি দুই মনোনয়নের মধ্যে একটি চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রার্থী মো. শওকত হোসেনের, আরেকটি রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রার্থী হাসিবুল আলমের। ফলে এই দুই বিভাগেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সমীকরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। যদিও কমিশন জানিয়েছে, যাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তারা চাইলে আপিল করার সুযোগ পাবেন। নির্বাচনী তফশিল অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার আপত্তি গ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা এ সময়ের মধ্যে আপত্তি জানালে কমিশন শুনানি শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে।
এবারের নির্বাচনে ক্যাটাগরি-১ (জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা) থেকে মোট ২৫ জন মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগ থেকে ৩ জন, চট্টগ্রাম থেকে ৪ জন, খুলনা থেকে ২ জন, রাজশাহী থেকে ৪ জন, সিলেট থেকে ১ জন, রংপুর থেকে ৩ জন এবং বরিশাল থেকে ১ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে ক্যাটাগরি-২ (ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব) থেকে সর্বাধিক ৩০ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এছাড়া ক্যাটাগরি-৩ থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন আরও ৩ জন। সব মিলিয়ে এবার মোট প্রার্থী দাঁড়িয়েছিল ৫১ জনের মতো। সেখান থেকে তিন জনের বাতিল হওয়ায় গতকাল পর্যন্ত সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৮ জনে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যেসব মনোনয়ন বাতিল হয়েছে সেখানে মূলত সমর্থনকারী ও প্রস্তাবকারীর দেওয়া স্বাক্ষরের অসঙ্গতি ধরা পড়েছে।
রিটার্নিং অফিসার ড. শেখ জোবায়েদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মনোনয়ন ফরমে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে কাউন্সিলর ফরমে দেওয়া স্বাক্ষরের মিল না থাকায় এগুলো বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাক্ষরের এ ধরনের অসঙ্গতি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গুরুতর ত্রুটি হিসেবে গণ্য হয়।
আজ বাতিল হওয়া প্রার্থীরা চাইলে আপত্তি জানাতে পারবেন। শুনানির পর কমিশন চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে আগামীকাল। তার আগে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাইলে সেই সুযোগ দেওয়া হবে। আর সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৬ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সব মিলিয়ে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই নির্বাচনের চিত্র আরও পরিষ্কার হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা বিভাগে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় আগেই দুই পরিচালকের নাম চূড়ান্ত হয়ে যাওয়া এ নির্বাচনে বড় খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর মনোনয়ন বাতিল নির্বাচনকে খানিকটা প্রভাবিত করলেও আপত্তি ও শুনানির পরই আসল চিত্র পরিষ্কার হবে। ফলে আগামী কয়েক দিন বিসিবির নির্বাচনী উত্তাপ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এর বাইরে খুলনা থেকে ২ প্রার্থী, সিলেট ও বরিশাল থেকে একজনের বেশি না থাকায় তারাও বিনা ভোটে নির্বাচিত হতে চলেছেন। সেজন্য তাদেরও অপেক্ষা মনোনয়ন বৈধতার। আগামীকাল তাদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেই এই চার জনসহ ঢাকা থেকে বুলবুল ও ফাহিম মিলিয়ে মোট ৬ জন পরিচালক হবেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।