
নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সম্মেলনের আগে সোমবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও এশিয়াজুড়ে রোহিঙ্গারা তাদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং জীবনের জন্য গুরুতর হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
এতে বলা হয়, ‘সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য একটি ব্যাপক, উদ্ভাবনী এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রস্তাব করতে’ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ রোহিঙ্গাদের ওপর উচ্চ-স্তরের সম্মেলন আহ্বান করছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর উচিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য গুরুতর হুমকিগুলো তুলে ধরা। তাদের জোর দেওয়া উচিৎ যে, নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য বর্তমানে কোনো পরিস্থিতি নেই, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এবং নির্যাতনের মধ্যে।
জাতিসংঘে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক লুই চারবোনো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি- সেখানে তারা বর্ণবাদ ও অন্যান্য নির্যাতনের শিকার মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার। জাতিসংঘের সদস্যদের সম্মেলনে স্পষ্ট করে বলা উচিত, এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাধ্য করা তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং তাদের অধিকার লঙ্ঘন করবে।
২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে জাতিগত আরাকান আর্মির সংঘর্ষে আটকা পড়েছে রোহিঙ্গারা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং বেআইনি নিয়োগসহ সকল পক্ষের গুরুতর নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
আরাকান আর্মি এখন রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক শ্রম এবং নির্বিচারে আটক রাখাসহ নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা জোরদার করেছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে কমপক্ষে ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, তারা তাদের বাড়িঘর এবং জমিতে ফিরে যেতে চায় – কিন্তু কেবল তখনই, যখন তারা নিরাপদ, স্বাধীন ও মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেতে সক্ষম হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, জাতিসংঘের সদস্যদের স্বীকার করা উচিত, বর্তমানে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিস্থিতি নেই। রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিকভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের অনুমোদনের বিরোধিতা করা উচিত।
সংস্থাটি আরও বলেছেন, পরিবর্তে দেশগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির নির্যাতনের নিন্দা করা, সীমান্ত পার মানবিক সহায়তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা এবং আরাকান আর্মির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পরিস্থিতি উন্নত করতে ও চলাচলের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া।