
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় আন্তর্জাতিক অনুদান কমছে দ্রুত। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র এ খাতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিলেও চলতি বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৫ মিলিয়ন ডলার, যা ৭২ শতাংশ হ্রাস। একইভাবে যুক্তরাজ্যের অনুদানও ৪৬ মিলিয়ন ডলার থেকে নেমে এসেছে ২৪ মিলিয়নে, অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক কমেছে সহায়তা।
এই ঘাটতি সামাল দিতে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বব্যাংক ৭০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। বিষয়টি উঠে এসেছে কোস্ট ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায়। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
কোস্ট ফাউন্ডেশন ও কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক অনুদান কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত বছর যেখানে সরকার ১১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল, এবার তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলারে।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক শাহিনুর ইসলাম জানান, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে মোট ৬৩টি প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, স্থানীয় এনজিওগুলো কার্যকরভাবে কম খরচে প্রকল্প চালাতে সক্ষম হলেও তারা মোট তহবিলের মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পায়। অথচ আন্তর্জাতিক এনজিওগুলো পরিচালনার খরচ বেশি হলেও তাদের হাতে থাকে বড় অংশের অর্থ। তাই রোহিঙ্গা সহায়তা কার্যক্রমে স্থানীয় সংস্থাগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ফাউন্ডেশনের যুগ্ম নির্বাহী পরিচালক ইকবাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের শুধু মুখে তুলে খাওয়ানোর জন্য রাখা উচিত নয়, বরং তাদের মানবসম্পদে রূপান্তর করা প্রয়োজন।’ অপরদিকে পরিচালক মোস্তফা কামাল আকন্দ সতর্ক করে বলেন, উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় রোহিঙ্গারা ধীরে ধীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠছে, আর স্থানীয়রা সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। ফলে শান্তি ও নিরাপত্তা সংকট বাড়ছে। এ জন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
‘রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তার স্থানীয়করণ’ শীর্ষক গবেষণাটি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জরিপ চালিয়ে এবং ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও নথি পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়।