
গণপরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে সিরিয়ার অন্তবর্তী সরকার। আগামী ৫ অক্টোবর দেশটিতে গণপরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর এটিই হবে দেশটির প্রথম পার্লামেন্ট নির্বাচন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, দেশের সব নির্বাচনী এলাকায় একসঙ্গে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
নতুন সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মহলে বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে।
মোট ২১০ আসনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সরাসরি নিয়োগ দেবেন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। বাকি আসনগুলো নির্বাচনী কমিশনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় কমিটিগুলোর মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। সংসদের দায়িত্ব হবে দীর্ঘদিনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক নীতি সংস্কারসংক্রান্ত আইন অনুমোদন করা এবং নতুন চুক্তি অনুমোদন করা, যা সিরিয়ার বৈদেশিক নীতি আমূল বদলে দিতে পারে।
সানা আরও জানায়, এই নতুন পার্লামেন্ট ‘বিস্তৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ভিত্তি স্থাপন করবে।’ গত ডিসেম্বর প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধ শেষে আল-আসাদের পতনের পর এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, বর্তমান ব্যবস্থা সিরিয়ার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করছে না।
আগে সেপ্টেম্বরে ভোটগ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনী কমিশন জানিয়েছিল, সুইদা, হাসাকা ও রাক্কা প্রদেশে নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে।
গত জুলাইয়ে সুইদায় দ্রুজ যোদ্ধা আর সুন্নি বেদুইন গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। অন্যদিকে হাসাকা ও রাক্কার কিছু এলাকা এখনো কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত মার্চে আল-শারার প্রশাসন একটি সাংবিধানিক ঘোষণা জারি করে। নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়কে পরিচালনার জন্য এই ঘোষণাই হবে পথনির্দেশক।
ঘোষণাপত্রে ইসলামি শরিয়াহর কেন্দ্রীয় ভূমিকা বহাল রাখা হয়েছে, পাশাপাশি নারীর অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। তবে বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই কাঠামোতে অতিরিক্ত ক্ষমতা সরকারের হাতেই কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে।
আল-শারা আগে আল-কায়েদার কমান্ডার ছিলেন। পরে অবশ্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং তার নতুন সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) আসাদের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক কূটনীতিতেও ঝুঁকছেন। দেশের নিরাপত্তা জোরদার ও সরকারকে টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসেবেই এ উদ্যোগ দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকে আল-শারা বলেন, ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা এখন ‘অপরিহার্য।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে কোনো চুক্তিই সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা সম্মান করতে হবে এবং ইসরাইলি বিমান হামলা ও আকাশসীমা লঙ্ঘনের ইতি টানতে হবে।