
ফ্রান্সে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় ধর্মঘটের প্রস্তুতি চলছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকরনুর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে একজোট হয়েছে, যাতে তিনি বাজেট কাটছাঁটের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করেন এবং মজুরি, পেনশন ও জনসেবা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেন।
পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় আট লাখ মানুষ দেশজুড়ে মিছিলে যোগ দিতে পারে। এতে স্কুল, রেল এবং বিমান পরিবহন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করে। সকাল ৭টার দিকে প্যারিস ও উত্তর ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি বাস ডিপো অবরোধ করা হয়। রাজধানীর পূর্বাঞ্চল এবং সোমের অ্যামিয়েন্সে হাইস্কুল অবরোধের ঘটনাও ঘটে। এর ফলে রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্বে দেশজুড়ে ২৫০টি বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন ফ্রান্স রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত। মাত্র এক বছরের মধ্যে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেকরনুকে নিয়োগ দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। এর আগে ফ্রাঁসোয়া বাইরু এবং মিশেল বার্নিয়ার বাজেট নিয়ে সংসদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পদ হারান। লেকরনু অতীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিলেও বিরোধীরা বিশ্বাস করছে না যে তিনি নতুন কিছু আনতে পারবেন।
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট বর্তমানে বাম, কট্টর ডান ও মধ্যপন্থীদের মধ্যে বিভক্ত। ২০২৪ সালের জুনে ম্যাক্রোঁর আকস্মিক নির্বাচনের পর থেকে কোনো পক্ষই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এর ফলে বাজেট নিয়ে বারবার অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে।
তবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে লেকরনুকে সমাজতান্ত্রিক দলের সমর্থনও প্রয়োজন। সমাজতান্ত্রিক নেতা অলিভিয়ের ফরে বলেছেন, তাদের দাবি হলো কঠোর বাজেট কাটছাঁট বন্ধ করা এবং ধনীদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্য আদায় করা। তিনি সতর্ক করে দেন, লেকরনু যদি এই দাবির প্রতি কর্ণপাত না করেন, তাহলে ভবিষ্যতে অনাস্থা ভোটে তারা তার বিপক্ষে ভোট দেবেন। অন্যদিকে, কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র্যালি নেত্রী মেরিন লা পেন লেকরনুর সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘যদি তিনি একই নীতি চালিয়ে যান, তবে তার পতন অবধারিত।’
ফ্রান্সের ঋণ ও ঘাটতি পরিস্থিতি রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও জটিল করেছে। বর্তমানে বাজেট ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত ৩ শতাংশ সীমার প্রায় দ্বিগুণ। ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১১৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান