
পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে টোকিওতে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ দেখতে এসেছেন দর্শক। জাপানে এসে ভাষা সমস্যায় ভুগছেন। ইংরেজিতে কথা বলতে গেলে জাপানি আগ্রহ দেখান না। তারা এড়িয়ে যান। আর যারা কথা না বুঝেন তারা খুব একটা সহযোগিতাও করতে পারছেন না। এ নিয়ে বিদেশিরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিশেষ করে ইংরেজি জানা দর্শক, যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর যেসব দেশ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে তারা একটু বিপাকেই পড়েছে।
প্রশ্ন করলেই জাপানি গুগলে চলে যান। সবার পকেটে শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। কীভাবে কোথায় যাবেন তা বলে দেবে। কিন্তু সেসবই জাপানি ভাষায়, কথাও বলছেন জাপানি ভাষায়। পরে দেখা গেছে যেতে চেয়েছেন নিশি সিনজুকু থেকে গিনজা। মাঝ পথে জানতে পারলেন টঙ্গীর যাত্রী চলে গেছেন নারায়ণগঞ্জে। বুঝতে পেরে আবার ট্রেন বদল করে নতুন করে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে নতুন লাইন ধরে কিছুটা যাওয়ার পর পাশের যাত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলেন এই ট্রেন তার গন্তব্যে যাচ্ছে না। পরের স্টেশনেই নামতে হয়েছে।
জাপানের ট্রেন ব্যবস্থা কতটা উন্নত কল্পনাই করা যায় না। সেকেন্ডে সেকেন্ডে ট্রেন, পথ-ঘাট না চিনলে, কিংবা কেউ সহযোগিতা না করলে পথ হারাতে হবে। নিহোমবাসি থেকে কানডা স্টেশনের মাঝে দুইটা স্টেশন। একটু ভুলে ট্রেন চলে গেছে সিমবাসি স্টেশনে, অন্য পথে। এ যেন যাত্রাবাড়ীর যাত্রী নামলেন মিরপুরে। সাধারণ যাত্রীই নয়, জাপানি অনেক সাংবাদিকও ইংরেজিতে আগ্রহী না। তারাও গুগল ট্রান্সলেট করে কথা বলেন।
২০০ দেশের অ্যাথলেট এসেছে টোকিওতে, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে খেলতে। প্রায় সব দেশেরই দর্শক এসেছেন। এমনও দেশ খেলছে যাদের নাম প্রথম শুনতে হয়েছে। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জ্যামাইকা, ক্যারিবিয়ান দেশের দর্শকের সংখ্যাটাও কম না। জাপানের মানুষের আন্তরিকতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেন। কিন্তু ভাষার কারণে তারা পিছিয়ে যান। যারাই টোকিওতে এসেছেন তারা ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করছেন। একটা ছোট্ট কথা বুঝাতেও ঘাম ঝরছে বিদেশির।
একজন নারী ডাক্তার, এখন অবসরে, ‘আমি খুব একটা ইংরেজি বলতে পারি না। অল্প, অল্প।’ ৭০ বছর বয়সী এই নারী ডাক্তার জানালেন তিনি ৪০ বছর কানাডায় ছিলেন। এখন অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। জাপানের পথে পথে ভাষা নিয়ে সমস্যার কথা বলতে গেলে তিনি বলছেন সরি সরি। জাপানি খুব একটা ইংরেজি বলেন না।’ তবে এটাও ঠিক যে, জাপানি ভাষা জানলে ভিসা পেতেও সুবিধা হয়।
জাপানে দুই ধরনের ট্রেন চলাচল করে। কেইকিউ বেসরকারি ট্রেন, জেআর (জাপান রেলওয়ে) সরকারি ট্রেন। সবক্ষেত্রেই একই সমস্যা। বিশ্বকাপ ফুটবল কিংবা অলিম্পিক গেমসের সময় স্টেশনগুলোতে কয়েকটি ভাষা জানা তরুণ-তরুণীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে সেটি নেই।
জাপান ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের সামনে সেনদাগায়া ট্রেন স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে ৪০-ঊর্ধ্ব পুরুষ কাওয়াসাকি। তার কাছে একজন জানতে গিয়েছিলেন রাতে শেষ ট্রেন কখন? কাওয়াসাকি জবাব দিলেন জাপানি ভাষায়। ঐ ব্যক্তি কিছুই বুঝলেন না। কাওয়াসাকি ইশারা দিয়ে বুঝালেন, ওখানে কার্ড পাঞ্চ করুন।’
আবারও একই প্রশ্ন করলেন। কিছুই হলো না। অনেক চেষ্টা করেও কিছুই উদ্ধার করতে পারলেন না। কাউন্টারে থাকা তরুণ সহকর্মী কিগোসিকে হাতের ইশারায় ডেকে একই সহযোগিতা চাইলেন। কিসোগি একটা কাগজ ধরিয়ে বললেন গো তু ইন্টারনেট। রাত কয়টা পর্যন্ত ট্রেন সেই সহজ তথ্যটা না পেয়ে প্রশ্ন কর্তা বিরক্ত হয়ে চলে যান।
ইংরেজি ভাষা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়লেও জাপান বলছে তাদের দেশে এবার শুধু এক মাসেই সাড়ে ৩ মিলিয়ন টুরিস্ট এসেছেন। জাপানে গুঞ্জন রয়েছে নাকি হংকং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিল জাপানে এবার ভূমিকম্প হবে। ভূমিকম্পের কারণে টুরিস্ট কমে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টুরিস্ট জাপান ভ্রমণে এসেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং যুক্তরাষ্ট্র হতে। স্কুল শিক্ষার্থীদের ছুটি কাটাতে সন্তানকে বাবা-মা জাপানে বেড়াতে এনেছেন। গত আগস্টে এত টুরিস্ট এসেছেন জাপানে সেই সংখ্যাটা অতীতের রেকর্ড ভেঙে গেছে। এটাই যদি হয়, তাহলে জাপানি ইংরেজি বলতে পারুক, না পারুক কী আসে যায়।