
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আবারও ফিরছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে। আর এই দায়িত্ব শেষ করে নিজ নিজ বাহিনীতে ফিরে যাচ্ছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা।
সরকারি সূত্র জানায়, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার দায়িত্বে দ্রুত এপিবিএন মোতায়েন করা হবে এবং বিমানবাহিনীর টাস্কফোর্স দায়িত্ব হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে নিজ বাহিনীতে প্রত্যাবর্তন করবে।
উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪ সালের আগস্টে আনসার বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে এক রাতেই হাজারখানেক আনসার সদস্য দায়িত্ব ত্যাগ করলে, তৎকালীন সংকট মোকাবিলায় অস্থায়ীভাবে বিমানবাহিনীর সদস্যদের টার্মিনালে মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে এপিবিএনকে অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়।
এপিবিএন তখন অভিযোগ তোলে, তাদের ‘এয়ার সাইডে’ অবস্থিত অফিসকক্ষ থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলা হয় অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (অ্যাভসেক) কর্তৃপক্ষের দ্বারা। বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। এ ছাড়া যাত্রী হয়রানি, ভিডিও ফাঁস, ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। বিষয়টি আরও বিতর্কিত হয় বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর আসিফ ইকবালের পাঠানো এক চিঠিতে, যেখানে এপিবিএন অধিনায়কের বিরুদ্ধে শিষ্টাচার ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের আইজিপি বাহারুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সচিব এম সাইফুল্লাহ পান্না, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান, বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক, বেবিচকের সদস্য (নিরাপত্তা) এয়ার কমোডর আসিফ ইকবালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো একই লক্ষ্যে কাজ করছে। আমাদের কথায় ও কাজে পেশাদারত্ব এবং পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখতে হবে।
আরও জানা যায়, সভায় ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলো বিমানবন্দরের একক কমান্ড, রেগুলেশন এবং নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিতের জন্য এখানে কার্যকর সব সংস্থাই বেবিচকের একক কর্তৃত্বে কাজ করবে এপিবিএন ও অ্যাভসেক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। যত দ্রুত সম্ভব এপিবিএন বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের ভেতরে কাজ শুরু করবে; আইজিপি ও বেবিচক চেয়ারম্যান অপারেশনাল চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সভা করবেন; বিমানবাহিনীর টাস্কফোর্স তাদের দায়িত্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাতৃ সংস্থায় ফিরে যাবে; সব বিমানবন্দরে প্রতি সপ্তাহে নিরাপত্তা সভা হতে হবে; সুদূরপ্রসারী কাঠামোগত পরিবর্তনে অংশ হিসেবে বেবিচককে অপারেটর ও রেগুলেটরের পৃথক ভূমিকায় পুনর্গঠনের বিষয়ে সুপারিশ জানাতে পারে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়।