
এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু সেই আলো দ্রুত নিভে গেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিং ব্যর্থতায়। মাত্র ১৩৯ রানে অলআউট হওয়া দলটি বল হাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারেনি। লঙ্কানরা নির্ধারিত লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে ৩২ বল বাকি থাকতে। এই পরাজয় শুধু ম্যাচ হার নয়, নেট রানরেটের কষাঘাতে টাইগারদের সুপার ফোরের পথকেও করেছে আরও জটিল।
আজ রাত সাড়ে ৮টায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে লিটন কুমার দাসের দল। সুপার ফোরে যেতে এই ম্যাচে জয়ের পরেও সমীকরণ মেলাতে হবে টাইগার বাহিনীর। দুই ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র একটি জয়। সমান ম্যাচ খেলে শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তান রানরেটে অনেক এগিয়ে আছে। এক কথায় বাংলাদেশকে এখন দাঁড়াতে হয়েছে ‘বাঁচা-মরার লড়াইয়ে’। শেষ গ্রুপ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। তবে শুধু জয় নয়, বড় ব্যবধানে জেতার প্রয়োজন রয়েছে- যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দেখে বেশ অবাস্তব মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশের সমস্যাটা মূলত ব্যাটিংয়ে। হংকংয়ের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের বিপক্ষে জয় এলেও সেটি আসেনি আত্মবিশ্বাস জাগানো ব্যাটিং থেকে। বড় দলের বিপক্ষে নামলেই ধসে পড়ে টপ অর্ডার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেটিই হয়েছে। প্রথম সারির ব্যাটাররা ব্যর্থ হলে পরের সারিরাও দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমন অনিয়মিত পারফরম্যান্স নিয়ে বড় টুর্নামেন্টে স্বপ্ন দেখা প্রায় অসম্ভব।
এখন বাংলাদেশের ভাগ্য অনেকটাই অন্য দলের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে। পরের ম্যাচে আফগানিস্তান যদি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারে, তবে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারিয়ে কিছুটা নির্ভার হতে পারে। কিন্তু আফগানিস্তান যদি জয় পায়, তাহলে সমীকরণ চলে যাবে নেট রানরেটের জটিল অঙ্কে। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সাম্প্রতিক ভঙ্গুর অবস্থা দেখে খুব বেশি আশা করার সুযোগ নেই।
জয়ের স্বপ্ন নিয়ে ‘সমীকরণের আর কোনো জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। বড় ম্যাচে মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে না পারা, শট সিলেকশনে দুর্বলতা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব- সব মিলিয়ে টাইগারদের এই সংকট অকারণে হয়নি। বছরের পর বছর একই ভুল করে আসলেও সমাধানের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ শিরোপা খেলা’ খেলছে, যেখানে ব্যর্থতার দায় এড়ানোর আর কোনো সুযোগ নেই।
চূড়ান্ত বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশ যদি আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে না দেয়, তবে এশিয়া কাপে তাদের যাত্রা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। আর যদি শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে সুপার ফোরে উঠেও যায়, সেটি হবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতায় ভর করে, নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের কারণে নয়। এমন ব্যর্থতা আর নির্ভরশীলতার ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ‘এশিয়ার প্রতিযোগিতামূলক দল’ হিসেবে দেখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
শুরু থেকে টাইগাররা বলে আসছেন, তারা শিরোপার জন্য খেলছেন। আগ্রাসনের বিষয়টি তারা এই অজুহাতেই উপেক্ষা করেছেন। এবার আফগানদের বিপক্ষে আগ্রাসনের ভিন্ন কোনো পথ নেই। পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উড ক্লাস নিয়েছেন লিটনদের, কিন্তু তারা সেই ক্লাসকে কাজে লাগাতে পারেননি। অবশ্য এই বিষয়ে টাইগারদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। বিসিবি থেকে সেই সংকট কাটানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব হলেও মাঠের চিত্র যেন কোনোভাবেই পরিবর্তন হচ্ছে না। আজকের ম্যাচে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া লিটনদের খেলার ধরন কেমন হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।