
ক্রিকেটকে পৃথিবীর অন্যতম ভদ্রলোকের খেলা বলা হয়। যেখানে মাঠের লড়াই যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, ম্যাচ শেষে প্রতিদ্বন্দ্বীকে সম্মান জানানোই ঐতিহ্য। কিন্তু এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষে সেই মূল্যবোধ একেবারেই দেখা গেল না। জয়ী হয়েও ভারতীয় খেলোয়াড়দের আচরণ ক্রিকেটের সৌন্দর্যকে ম্লান করেছে।
গেল রোববার রাতে ভারতের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা সূর্যকুমার যাদব ও শিবম দুবে ম্যাচ শেষ হতেই সরাসরি ড্রেসিংরুমে চলে যান। প্রতিপক্ষের সঙ্গে করমর্দনের মতো প্রথাগত সৌজন্যতাও তারা রক্ষা করেননি। বরং তাদের পেছনে ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ভেতরে গিয়ে দেখা করতে না পারেন। পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলেও তাদের সেই অপেক্ষা বৃথা গেছে।
শুধু ম্যাচ শেষে নয়, টসের সময়ও একই অমার্জিত আচরণ দেখা গেছে। পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগার সঙ্গে হাত মেলাতেও অস্বীকৃতি জানান ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার। ফলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সৌজন্যের ন্যূনতম চিত্রটিও অনুপস্থিত ছিল ভারতীয় শিবিরে।
ভারতের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছে পাকিস্তান। প্রতিবাদ জানাতে তারা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। পাকিস্তানের কোচ থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটাররা সবাই স্পষ্ট বলেছেন-ভারত রাজনীতি টেনে এনেছে ক্রিকেটে। খেলাকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার অস্ত্র হিসেবে। ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি সংহতি জানাতেই তারা পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশের নাম করে প্রতিপক্ষকে অসম্মান জানানো কতটা গ্রহণযোগ্য? ক্রিকেটীয় চেতনার সঙ্গে এর কোনো সামঞ্জস্য নেই। সাবেক খেলোয়াড় শোয়েব আখতার ও রশিদ লতিফের মতো তারকারা প্রকাশ্যে বলেছেন- খেলা শেষে প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো সৌজন্যের অংশ। ভারত সেটি এড়িয়ে গিয়ে আসলে দেখিয়েছে, তারা রাজনৈতিক উত্তেজনাকেই মাঠে নিয়ে এসেছে। এমনকি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে।
তবে নিয়মের দিক থেকে ভারতকে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ সীমিত। কারণ, আইসিসির আচরণবিধিতে কোথাও লেখা নেই যে, ম্যাচ শেষে করমর্দন বাধ্যতামূলক। ফলে বড়জোর একটি ‘মৃদু সতর্কতা’ দেওয়া হতে পারে। আর আইসিসির শীর্ষপদে ভারতীয় প্রভাব বিদ্যমান থাকায় বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতি কেবল ক্রিকেট নয়, পুরো খেলাধুলার জন্যই দুঃসংবাদ।
ভারতীয় দল মাঠে লড়াইয়ে জয় পেলেও ভদ্রতার পরীক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিপক্ষকে অসম্মান দেখিয়ে জেতা জয় কখনোই ক্রীড়াচেতনাকে সমুন্নত রাখে না এমনটাই বলছেন নেটিজেনরা। বরং এই ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে- ভারত রাজনীতির ছায়া ক্রিকেটে টেনে এনে খেলাটির মহত্বকেই কলঙ্কিত করেছে।
এদিকে হ্যান্ডশেক ইস্যুর জের ধরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন রাজা নাকভি বোর্ডের আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক উসমান ওয়াহলাকে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। একই সঙ্গে পিসিবি আইসিসি ও এমসিসিকে চিঠি দিয়ে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটকে চলমান টুর্নামেন্ট থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এমনকি রেফারিকে সরানো না হলে এশিয়া কাপ থেকে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ পুনর্বিবেচনা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে বোর্ড।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম দ্য ট্রিবিউনের প্রতিবেদন মতে, পিসিবি অভিযোগ করেছে-ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ম্যাচে খেলাধুলার ‘স্পিরিট অব দ্য গেম’ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি আইসিসি কোড অব কন্ডাক্ট এবং এমসিসি আইনের লঙ্ঘন করেছেন, যা গুরুতর অপরাধ।