
গাজা সিটিতে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৬৮ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা শহরের বাসিন্দারা বলছেন- ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের স্থল আক্রমণ প্রসারিত করার খবরের মধ্যে অবিরাম বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছেন। আজ ভোর থেকে গাজা জুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৬৮ জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিশন জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে, যা গণহত্যার শামিল। কমিশনের ৭২ পাতার আইনি বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং শীর্ষ নেতৃত্ব এই অভিযানে সরাসরি উসকানি দিয়েছেন।
কমিশনের প্রধান ও প্রাক্তন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারক নাভি পিল্লাই বলেছেন, ‘গাজায় গণহত্যা ঘটছে এবং এর দায়ভার ইসরায়েলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের।’ তিনি রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে পরিস্থিতির তুলনা টেনে বলেন, ফিলিস্তিনিদের ‘অমানুষ’ হিসেবে দেখিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণহত্যার সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত পাঁচটি কাজের মধ্যে অন্তত চারটি ইসরায়েল করেছে। হত্যা, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, জীবনযাত্রার এমন অবস্থা চাপানো যাতে জনগোষ্ঠী ধ্বংস এবং জন্ম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ভুক্তভোগী ও চিকিৎসকদের সাক্ষাৎকার, স্যাটেলাইট চিত্র এবং যাচাইকৃত তথ্য।
এতে নেতানিয়াহু ছাড়াও ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্টের বক্তব্যকে গণহত্যামূলক উদ্দেশ্যের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েল মেরন প্রতিবেদনটিকে ‘কলঙ্কজনক’ ও ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেন, ‘হামাসের পক্ষপাতীরা এটি রচনা করেছে।’ ইসরায়েল এই কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইসরায়েল বর্তমানে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ছে। দেশটি দাবি করছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পরে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, পরবর্তীতে ইসরায়েলের অভিযানেই ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং বহু এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে।
জাতিসংঘ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার জন্য ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেনি। তবে এই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে শব্দটি ব্যবহারের চাপ বেড়েছে।