
টোকিওর সিনাগাওয়া এলাকায় প্রিন্স হোটেল যেন অ্যাথলেটদের হাট। খুব নামকরা একটি হোটেল। ২৯ তলা ভবন। ১০টা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা। কিন্তু কোনো গেটই ফাঁকা নেই। ভিড় লেগেই আছে। ভিড়ের মধ্যে চোখ আটকে গেল। সাদা টিশার্ট গায়ে ভারী শরীরের জ্যামাইকান দুই জন নারী ঢুকছেন হোটেল। তাদের গায়ে টিশার্টে ছাপা শ্যালির আন্টি। দুই জনের গায়ে লেখা দেখে অবাক লাগল। লিখে এনেছেন তারা শ্যালির আত্মীয় হন। এটা দেখে অনেকেরই চোখ পড়ছে।
ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস উপভোগ করার জন্য গ্যালারিতে ঢোকার অ্যাথলেটদের একটা আলাদা গেট রয়েছে। লেখা আছে অ্যাথলেটদের আত্মীয়স্বজনের প্রবেশ পথ। জ্যামাইকান অ্যাথলেট শ্যালি অ্যান ফ্রেজার আগের দিন রাতে জাপান ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ষষ্ঠ হয়েছেন। হয়তো এটাই তার শেষ ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস। তার খেলা দেখে গতকাল শ্যালির আত্মীয়রা প্রিন্স হোটেলে ঢুকছেন। এরপর আর খুঁজে পাওয়া গেল না। হোটেল আঙ্গিনায় চারদিকে রেস্টুরেন্ট। একটি চেয়ারও খালি নেই। চেয়ার পাওয়ার জন্য ক্রেতারা গেটের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে। যেখানেই তাকাবেন, প্রায় প্রত্যেক টেবিলে অ্যাথলেট বসে আছেন।
অস্ট্রেলিয়ান একজন নারী অ্যাথলেট কথা বলছিলেন আর কাঁদছিলেন। কান পেতে মনে হলো আগের দিন খেলতে গিয়ে পদক তালিকায় নাম তুলতে পারেননি বলেই হয়তো সহ খেলোয়াড়ের কাছে মনের কষ্ট প্রকাশ করে হালকা হচ্ছিলেন। নারীর কান্না বলে কথা। হোটেলের চার পাশে চক্কর দিয়ে ফেরার পরও দেখা গেল সেই নারীর কান্না থামেনি।
দুপুর বেলা প্রিন্স হোটেলের কোনো রেস্টুরেন্টে চেয়ার পাওয়া যায় না। স্কুল ছুটি হওয়ার পর বাবা-মা তাদের শিশু সন্তানকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে আসছেন। সেখানেও কোনো চেয়ার খালি নেই। হোটেলের মূল ভবনে গিয়ে দেখা যায় অ্যাথলেটদের ভিড়ে হোটেল লবি গিজ গিজ করছে। একটি চেয়ারও খালি নেই। একটি পিলারের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ডিসকোয়ালিফাই হওয়া বতসোয়ানোর অ্যাথলেট, অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী লেসিল তেবেগো।
কালো রংয়ের ট্র্যাকসুট। মাথায় কালো রংয়ের ক্যাপ। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে গেলে মনের বিরুদ্ধে হাসি মুখে কথা বললেন। কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেয়েছেন অ্যাথলেটিকসে বতসোয়ানো আলো করা এই অ্যাথলেট। প্যারিস অলিম্পিকে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জয় করেছিলেন লেসিল তেবেগো। যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলসকে হারিয়ে। আফ্রিকান দেশ বতসোয়ানোর কেউ প্রথম অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জয় করেছিলেন তিনি। সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এবার লেসিল তেবেগো ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে এসে ডিসকোয়ালিফাই হবে পৃথিবীর অ্যাথলেটিকস অনুরাগীদের ভাবনায় ছিল না।
রোববার রাতে সবার চোখ যখন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে তখনই ট্র্যাক ছেড়ে বেরিযে যেত হয়েছিল লেসিল তেবেগোকে। লজ্জা পেয়েছেন তেবেগো। হোটেল লবিতে প্রশ্নটা করলে তেবেগো কথাই বলতে চাননি। তার জীবনে নাকি ডিসকোয়ালিফাই হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। ‘নাহ, আমি কখনো ডিসকোয়ালিফাই হইনি এটাই প্রথম। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে, এটি হতে পারে।’
টেনশন ছিল, ‘হ্যাঁ একটু বেশি টেনশন ছিল। কিন্তু ডিসকোয়ালিফাই হওয়ার মতো কিছু ঘটে যাবে সেটা এখনো ভাবতে পারছি না-বিরক্তির সুরে তেবেগো। রাতে ঘুম হয়নি? ‘আপনি কি মজা করছেন। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের মঞ্চে এসে ডিসকোয়ালিফাই হওয়ায় প্রশ্নটি বারবার ঘুরে আসছে। এ অবস্থায় একজন অ্যাথলেট কি ঘুমাতে পারে, আপনি হলে কি নাইট ক্লাবে যেতেন। ঘুম হয়নি। এখনো মেনে নিতে পারছি না ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে আমি নেই। সারা জীবন রেকর্ডে লেখা থাকবে আমি ডিসকোয়ালিফাই হয়েছিলাম। সারা জীবন বলা হবে একই কথা। এক বছরও হয়নি অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জয় করেছি। সেই আমাকে ডিসকোয়ালিফাই হতে দেখলেন সবাই। একটু টেনশন ছিল।’
লেসিল তেবেগো জানিয়েছেন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ডিসকোয়ালিফাই হলেও আত্মবিশ্বাস রাখছেন ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। ওখানে আর ভুল যেন না হয়, সে দিকটা নিয়ে কাজ করছেন তার কোচ।