
এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের হারের চিত্রটা আসলে নতুন কিছু নয়-পুরোনো ব্যর্থতার আরেকটি অনুলিপি। মাঠে নামার আগে বড় বড় কথা, স্মার্ট ক্রিকেট খেলার প্রতিশ্রুতি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন-সবই যেন মুখের বুলি! বাস্তবে মাঠে নেমে দেখা গেল বাংলাদেশ দলের চরম ভঙ্গুরতা। টপ-অর্ডারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং, মিডল অর্ডারের অবহেলা আর বোলারদের ধারহীনতায় ভরাডুবিই ছিল অনিবার্য। মাত্র ১৩৯ রান তুলে শেষ হয়ে গেল লিটন দাসের দল, শ্রীলঙ্কা যা হাঁটাচলা করেই উড়িয়ে দিল হাতে ৩২ বল রেখে।
ম্যাচ শেষে জাকের আলী অনিকের কথাতেও লুকানো যায়নি দায়। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন, পাওয়ার প্লেতে এত উইকেট হারালে আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ থাকে না। অথচ একই মুখে তিনি আবার বাতাস আর গরমের অজুহাত টেনে আনলেন। প্রশ্ন হলো, এই বাতাস কি কেবল বাংলাদেশের দিকেই বইছিল? শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা কি অন্য কোনো গ্রহ থেকে এসেছিল? সত্যটা একটাই-বাংলাদেশের ব্যাটিং মানসিকভাবে দুর্বল, কৌশলে শূন্য, আর দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি অযোগ্য।
অধিনায়ক লিটন দাসও আত্মসমর্পণের মতো স্বীকারোক্তি দিয়েছেন- পাওয়ার প্লেতেই ম্যাচ হারিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেছেন, উইকেট এত ভালো ছিল যে ১৭০-১৮০ রান করা সম্ভব ছিল। কিন্তু কথার চেয়ে কাজে প্রমাণ নেই। দল যখন একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে, তখন অধিনায়ক নিজেই কেবল হাহুতাশ করে দাঁড়িয়ে থাকেন। নেতৃত্ব যদি এতটাই দুর্বল হয়, তবে মাঠে লড়াইয়ের আগুন জ্বলবে কোথায়?
বারবার একই ব্যর্থতা এখন প্রমাণ করছে, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা শিখতে চান না। তাদের কাছে পাওয়ার প্লে মানে শুধু চার-ছয়ের চেষ্টা, কিন্তু সিঙ্গেল-ডাবল ঘুরিয়ে ইনিংস গড়ার বুদ্ধি নেই। একবার চাপ এলে সবাই হাল ছেড়ে দেন। আর শেষে দুজন-তিন জন ব্যাটার কষ্ট করে রান তুললেও ম্যাচ ঘুরে দাঁড়ায় না। এটাকে ক্রিকেট নয়, এটাকে দায়সারা খেলা ছাড়া আর কিছু বলা যায়না।
সমালোচনার তীর এখানেই থেমে থাকলে ভুল হবে। দায় কেবল ব্যাটিং ইউনিটের নয়-পুরো দলের। বোলাররা উইকেট তুলতে পারেন না, ফিল্ডিংয়ে দেখা যায় ঢিলেঢালা মনোভাব, অধিনায়কত্বে নেই কোনো কৌশলগত সাহস। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই একই নাটক চলে-প্রথমে বড় বড় কথা, তারপর ভরাডুবি, শেষে অজুহাতের পাহাড়। এই চক্র যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্থায়ী রোগে পরিণত হয়েছে।
সবচেয়ে লজ্জার হলো হাজারো সমর্থক দেশের বাইরে গিয়ে প্রাণপণ সমর্থন দেন, গ্যালারি লাল-সবুজে ভরে ওঠে, অথচ ক্রিকেটাররা তাদের মর্যাদা রাখতে পারেন না। প্রতিবারই আশার ফানুস উড়িয়ে শেষে সেটিকে নিজেরাই ফাটিয়ে দেন। মাঠে প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশ দল এখন দাঁড়ায় অতিথি দলের মতো, যারা কেবল অংশগ্রহণের জন্যই খেলতে আসে।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন বারবার শোনানো হলেও সত্যটা হলো-এই দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো মেরুদণ্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দায়িত্বশীলতা নেই, শৃঙ্খলা নেই, মানসিক দৃঢ়তা নেই। এভাবে ক্রিকেট খেললে বাংলাদেশ শুধু সমর্থকদের স্বপ্ন ভাঙতেই থাকবে। আর ইতিহাসে লেখা হবে একটাই সত্য- বাংলাদেশ দল বড় টুর্নামেন্টে বারবার ভেঙে পড়া এক ব্যর্থতার প্রতীক।