
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি বলছে, সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া যেতে পারে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি আইনি ভিত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সংবিধান আদেশ বা গণপরিষদের পরামর্শ দিয়েছে। স্বৈরাচার যেন আবার ফিরে আসতে না পারে, এজন্য সব পক্ষকে ঐক্যমতে পৌঁছানোর তাগিদ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রস্তুতের জন্য দুই ধাপে বেশ কয়েকদিন বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। নোট অব ডিসেন্টসহ ৮৪ বিষয়ে একমত হয় দলগুলো। তবে জটিলতা দেখা দেয় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রোববার বেলা ৩টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে অনড় অবস্থান থেকে বেরিয়ে বেশ কিছু নতুন প্রস্তাব দেয় রাজনৈতিক দলগুলো।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরে প্রস্তুত, তবে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে: সালাহউদ্দিনজুলাই সনদ স্বাক্ষরে প্রস্তুত, তবে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে: সালাহউদ্দিন
বিএনপি বলছে, তারা সনদে সই করতে প্রস্তুত। তবে সাংবিধানিক বেশ কিছু বিষয় সংস্কারের ক্ষেত্রে পদ্ধতি কী হতে পারে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষরে প্রস্তুত। অঙ্গীকারনামা আছে একটি, সেটি নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। সনদ স্বাক্ষর হলে তার বাস্তবায়নে আমরা আশাবাদী। বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। তবে আমরা এমন কোনো পদ্ধতি চাই না, যার মাধ্যমে আইনের ক্ষমতার বাইরে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়—তা আমরা চাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। প্রশ্নাতীতভাবে যেন সনদ বাস্তবায়ন করা যায়, তাই সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে, সেটাও বলে এসেছি।’
এদিকে সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে অনড় অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী। দলটি মনে করছে, সংবিধান আদেশ ২০২৫ জারি করলে ভবিষ্যতে এই সনদ আইনি চ্যালেঞ্জে পড়বে না।
স্বৈরাচার ফেরার সব রাস্তা বন্ধ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টাস্বৈরাচার ফেরার সব রাস্তা বন্ধ করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এমন একটা পদ্ধতিতে যেতে চাই, যাতে আগামীতে কেউ এই সনদকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে। আর করলেও তা টিকবে না। তাই একে সংবিধান আদেশ ২০২৫ নামে অর্ডার জারি চাই জামায়াত। সেটা আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।’
সংস্কারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে সমাধানে আসতে হবে জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, গণপরিষদই হতে পারে সমাধান।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘শেষপ্রান্তে এসে আমরা আশা হারাতে চাই না। সংস্কারের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিষয়গুলোতে সমাধানে আসতে হবে। এতোদিনের আলোচনায় জুলাই সনদ যেন আইনি ভিত্তি পায় সেটা আমরা চাই। ৮৪ পয়েন্টের মধ্যে ৪৩টি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত, গণপরিষদের মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জানান, সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য স্বৈরাচারের ফেরার পথ ঠেকানো। তাই সবাইকে দ্রুত ঐক্যমতে পৌঁছানোর তাগিদ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই ঐকমত্য কমিশন সারাবিশ্বে নজির হয়ে থাকবে। যদি সবাই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচন হবে মহাউৎসবের, নবজন্ম হবে। স্বৈরাচার যেন আর কোনোভাবেই ফিরে আসতে না পারে, সেজন্যই এত সংস্কার। এজন্য সবাইকে একমত হতে হবে, দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই।’
এসময় ফেব্রুয়ারিতে অবশ্যই জাতীয় নির্বাচন হবে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।