
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে সাফারি ওয়ার্ল্ড চিড়িয়াখানায় সিংহের আক্রমণে এক কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি বহু দর্শনার্থীর চোখের সামনে ঘটায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে কর্তৃপক্ষ ড্রাইভ-ইন জোন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে।
বন্যপ্রাণী বিভাগের মহাপরিচালক আত্তাপল চারোয়েনচানসা জানান, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ড্রাইভ-ইন জোন বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ওই কর্মী তার গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার পর একটি সিংহ তাকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। মুহূর্তেই আরও কয়েকটি সিংহ ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আক্রমণ চালায়। পরে আরেক কর্মী এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলেও তিনি বাঁচতে পারেননি।
আত্তাপল চারোয়েনচানসা আরও জানান, সিংহের খাবারের সময় কাছাকাছি থাকায় এ হামলা ঘটে থাকতে পারে। তার ভাষায়, ‘সম্ভবত একটি সিংহের আচরণ অস্বাভাবিক ছিল, সেটিই প্রথমে আক্রমণ চালায়।’ তিনি আরও জানান, চিড়িয়াখানার সিংহ রাখার লাইসেন্স এবং রেকর্ড যাচাই করা হবে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চিড়িয়াখানার ৪৫টি সিংহ রাখার অনুমতি ছিল, এর মধ্যে ১৩টি ইতোমধ্যেই মারা গেছে।
খান্নায়াও থানার পুলিশ নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তিনি জিয়ান রাংখারাসামী (৫৮), চিড়িয়াখানার একজন সুপারভাইজার। তার সহকর্মী ফানম সিটসায়েং আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ইন্তারাত হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ জানায়, জিয়ান ওই এলাকার প্রাণী তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে দরজা খোলা রেখেছিলেন, তখনই আক্রমণের শিকার হন। দর্শনার্থীদের সব সময় গাড়ির ভেতরেই থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জিয়ানের স্ত্রী রাতনাপর্ন জিৎপাকদি (৫৭) জানান, তিনি স্বামীর মৃত্যুতে শোকাহত ও বিস্মিত। তার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন এবং প্রাণীদের প্রতি ভীষণ অনুরাগী ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিংহ ও বাঘের যত্ন নিলেও আগে কখনো কোনো প্রাণী তার ওপর আক্রমণ চালায়নি।
নিহতের ছোট ভাই সুরাচাই রাংখারাসামী জানান, জিয়ান প্রায় দুই দশক ধরে সিংহ ও বাঘের জোনে কাজ করছিলেন।
সাফারি ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে নিহত কর্মীর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। তারা জানায়, চিড়িয়াখানার সব সিংহ ও অন্যান্য প্রাণী স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৪০ বছরে এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি। দর্শনার্থী ও কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এবং বিশেষ করে শিকারি প্রাণীর এলাকায় গাড়ি থেকে না নামতে সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত পর্যালোচনা ও প্রয়োজনে শক্তিশালী করা হবে।
সূত্র: ব্যাংকক পোস্ট