
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সদ্য নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও কানাডায় ১ কোটির বেশি অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ তার কর নথিতে (ট্যাক্স ফাইল) অপ্রকাশিত বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পেয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, এএফএম শাহীনুল ইসলাম ইস্টার্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তার মেয়ে নোভা ইসলামের কাছে কানাডায় প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা পাচার করেছেন। তবে তিনি তার কর নথিতে মাত্র ১০ লাখ টাকা ঘোষণা করেছিলেন। অর্থাত্ অবৈধভাবে তিনি ১ কোটি টাকারও বেশি কানাডায় পাচার করেছেন।
কর গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, সাবেক বিএফআইইউ প্রধানের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বড় ধরনের লেনদেন পাওয়া গেছে। তার মালিকানাধীন ফ্ল্যাট সম্পর্কিত তথ্যও পাওয়া গেছে। যার মূল্য তিনি তার কর নথিতে গোপন করেছেন।
এছাড়া তার একাধিক ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট লেনদেনের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর বাইরে বিকাশ ও রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং একাধিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও অসংখ্য লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে। এমনকি ২০ লাখ টাকার একটি এফডিআর পাওয়া গেলেও সেটি আয়কর ফাইলে উল্লেখ করেননি তিনি। শুধু ব্যাংক হিসাবেই নয়, সম্পত্তি ক্রয়েও অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগ।
সূত্র জানায়, স্ত্রী সুমা ইসলামের নামে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী রমনায় ১ হাজার ১০৫ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। দলিলে দাম দেখানো হয়েছে ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, অথচ প্রকৃত বাজারমূল্য প্রায় ৭১ লাখ টাকা। অথচ সুমা ইসলামের কোনো বৈধ আয় নেই এবং তিনি কখনো আয়কর রিটার্নও দাখিল করেননি।
এছাড়া শাহীনুল ইসলাম বর্তমানে যে ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন, সেটি শ্বশুর আলাউদ্দিন খানের নামে নিবন্ধিত। দলিলে মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। তবে গোয়েন্দাদের যাচাইয়ে ফ্ল্যাটটির প্রকৃত মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। আলাউদ্দিন খানও কখনো আয়কর রিটার্ন দাখিল করেননি।
আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাহীনুল ইসলামের ব্যাংক, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ও রকেট লেনদেনে যে অঙ্কের লেনদেন পাওয়া গেছে, তা তার আয়কর নথির সঙ্গে বিরাট অসংগতি সৃষ্টি করছে। করফাঁকির পাশাপাশি বৈধতার আড়ালে অবৈধ অর্থপাচারের শক্ত প্রমাণ মিলেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমেও কানাডায় টাকা পাঠানো হয়ে থাকতে পারে।’
উল্লেখ্য, এক ভিডিও কেলেঙ্কারির জেরে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি শাহীনুল ইসলামকে ছুটিতে পাঠায়। পরে গত ৮ সেপ্টেম্বর সরকার তার বিএফআইইউ প্রধান পদে নিয়োগ বাতিল করে।