Dark Mode Light Mode

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Follow Us
Follow Us
English English

স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু কারাগারে

স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু কারাগারে স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু কারাগারে
স্বাস্থ্যের মাফিয়া মিঠু কারাগারে


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জরুল ইসলাম মিঠু অবশেষে গ্রেফতার হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে মিঠুকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৭৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পর দুদকে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আদালতে নেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করেন।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে জানা যায়, লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিঠু কৃষিজমি ক্রয়, জমি লিজ, প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে মোট ১৮ কোটি ৪০ লাখ ৫১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ার ও বিনিয়োগ, গাড়ি ক্রয়, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে আরো ৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ তার নামে পাওয়া গেছে। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এছাড়া মিঠুর নামে পারিবারিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাত্ সম্পদ ও ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের হিসাব দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

Advertisement

অন্যদিকে, অনুসন্ধানে ৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বৈধ উত্স পাওয়া গেছে। অর্থাত্ বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। এজন্য দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মিঠুর যত অপকর্ম : দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি বেবি স্কেলার (বাচ্চাদের ওজন মাপার যন্ত্র) সরবরাহ করেছিল এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দাম সাড়ে ৭ হাজার টাকা। কিছুদিন পর সেটি নষ্ট হলে যন্ত্রটি ঠিক করতে ব্যয় হয় ৪ লাখ ১১ হাজার ৯০০ টাকা। 

অর্থাত্ মেরামতের টাকায় আরো ৫৪টি যন্ত্র কেনা যেত। বেবি স্কেলার মতো একটি কার্ডিয়াক মনিটর মেরামতের ব্যয়ও ছিল কেনা দামের চেয়ে বেশি। যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকায়। অথচ মেরামতে খরচ দেখানো হয় ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে ৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকায় ফটোথেরাপি যন্ত্র সরবরাহ করে মেরামত বাবদ নেওয়া হয় ৬ লাখ ৪০০ টাকা। রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে সাতটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহে ২০১৬ সালের ২৯ মে কার্যাদেশ পায় কিউ সোর্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার স্বত্বাধিকারী মিঠুর ভাই মুকুল ইসলাম। পরদিন ৩০ মে জার্মানি, ব্রাজিল, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, পোল্যান্ড, চীন ও জাপানের তৈরি ২৪ কোটি ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৯৯০ টাকার সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়। ১ কোটি ৮ লাখ টাকায় পাঁচটি রেডিয়েন্ট ওয়ার্নার সরবরাহ করা হয় ডেভিড ব্র্যান্ডের, তাতে উত্পাদনকারী দেশের নাম ছিল জার্মানি। কিন্তু ওয়েবসাইটে এই নামের কোনো প্রতিষ্ঠানই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

দুদকের নথিপত্রে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শুরু করে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল, দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও আইএইচটি সিলেটসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি কাজে মিঠুর ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিঠুর প্রতিষ্ঠান ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিত্সা সরঞ্জাম সরবরাহের কার্যাদেশের বিপরীতে মালপত্র সরবরাহ না করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাত্ করেন। ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ এবং টেকনোক্র্যাট লিমিটেড নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। ২০১৭ সালে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি রোধে দুদক একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে। ঐ সময় মিঠু দুদক থেকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ প্রাপ্তির পরও দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে দুদক।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২০১৬-১৭ পর্যন্ত মিঠুর স্ত্রীর ফিউচার ট্রেড ৮৬ কোটি টাকার বেশি কার্যাদেশ পায়। এ থেকে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা আত্মসাত্ করেন তিনি। ভাগনে মো. ফাহাদ মাহমুদের অরডেন্ট সিস্টেম ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আত্মসাত্ করে ৪ কোটি টাকা। মিঠুর ভাবি সাবিহাতুল জান্নাতের জিএসই অ্যান্ড ট্রেডিং কয়েক বছরে ৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকার কার্যাদেশ থেকে আত্মসাত্ করে প্রায় ২০ কোটি টাকা। রংপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনে মোকছেদুলের কিউ সোর্স ২০১৩-১৪ থেকে তিন অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাত্ করে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চক্রটি সিএমএসডি থেকে ৭৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার কার্যাদেশ পায়, তাতে ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাত্ করা হয়। এ সময়ে চক্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে আরো ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

নামে-বেনামে ৬১ প্রতিষ্ঠান : স্বাস্থ্যের মাফিয়া বা মিঠুর মূল প্রতিষ্ঠানের নাম লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ। এর বাইরে তার নামে-বেনামে রয়েছে আরো ৬০টি প্রতিষ্ঠান। তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বাজেট তৈরি থেকে শুরু করে কেনাকাটার যাবতীয় পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিতেন। মিঠু ৬১টি আলাদা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে সব ধরনের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করতেন। মিঠুর নিজ নামে আছে আটটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হলো লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজার, টেকনো ট্রেড, লেক্সিকোন আইটি পার্ক লিমিটেড, মেসার্স টেকনো ট্রেড, মেসার্স টেকনো ফিশিং, মেসার্স প্রি-এক্স, সিআর মার্চেন্ডাইজ, লেক্সিকোন হসপিটালাইট, নর্থ এগ লিমিটেড, নর্থ বেঙ্গল পোলট্রি ফার্ম, অ্যাপল সিরামিক লিমিটেড, মেড ইকুইপ ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনভেনচার, টেকনোক্র্যাট ও এম গেটওয়ে করপোরেশন (যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত)। মিঠুর স্ত্রী নিশাত ফারজানার নামে তিনটি এবং বড় ভাই মো. মোকছেদুল ইসলামের নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আছে। এ ছাড়া মিঠু অন্যান্য ভাই, ভাবি, ভাগনেসহ বন্ধু ও স্বজনদের নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করছেন।

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ডা. শহীদউল্লাহ ২০২০ সালে করোনায় মারা যাওয়ার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়ে মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এরপর তদন্ত শুরু হয়।

মিঠুর আদিবাস রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর গ্রাম। যদিও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ঢাকার গুলশান, বনানী, এলিফ্যান্ট রোড, মালিবাগ, ডিওএইচএস এবং চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের সাতটি বাসার তথ্য আছে। তার নামে আরব-বাংলাদেশ ব্যাংকেই দেড় হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে।

বিদেশে সম্পদ জব্দ : মিঠুর ঘনিষ্ঠরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে গত ৫ অক্টোবর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে মিঠুর ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। এ সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের ব্রংকসে বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট। ২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন। ঐ দেশে হোটেল-মোটেল ব্যবসাও রয়েছে তার। আটলান্টায় ‘মোটেল সিক্স’ নামে একটি বিলাসবহুল প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পরিচালক তিনি। যেখানে তার লগ্নি প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার। নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসেও মিঠুর দুটি দোকান রয়েছে, যেগুলোর মূল্য ১ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ম্যানহাটনে ১৫ মিলিয়ন ডলারে কেনা একটি অফিস রয়েছে মিঠুর। ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় তার আরো দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে, যা মার্কিন সরকার সম্প্রতি জব্দ করেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।





Source link

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে কাতারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে কাতারে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

Next Post
নেপালের পরিস্থিতি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-ইন্দোনেশিয়া ধাঁচের: সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা

নেপালের পরিস্থিতি বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-ইন্দোনেশিয়া ধাঁচের: সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা

Advertisement