
ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান গণহত্যা ও দুর্ভিক্ষের মাঝে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কায়ার স্টারমার বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগের সঙ্গে বিতর্কিত বৈঠক করেছেন। অর্ধশতাধিক এমপির আপত্তি ও লন্ডনে বিক্ষোভ সত্ত্বেও হার্জোগকে ডাউনিং স্ট্রিটে এই আতিথ্য দেওয়া হলো।
হার্জগের এই সফর এমন এক সময় এলো, যখন স্টারমার সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের সমালোচনা জোরদার করেছেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটছেন।
ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন অনুসারে, বৈঠক শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউনিং স্ট্রিটে আলোকচিত্রী এবং টিভি ক্যামেরার সামনে দু’জন করমর্দন করেন। তবে তাদের মুখে খুব কম হাসি দেখা যায়।
ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মুখোমুখি সাক্ষাতে স্টারমার আগের দিন দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলের বিমান হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, এই হামলাগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা সকলেই যে শান্তি দেখতে চাই, তা নিশ্চিত করার জন্য এটির কোনো ভূমিকা নেই।
মুখপাত্র আরও জানান, স্টারমার গাজায় ‘মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ’ সম্পর্কে ‘বিশাল উদ্বেগ’ উত্থাপন করেন। সেই সঙ্গে সাহায্য পুনরায় শুরু করার এবং ‘আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ করার’ আহ্বান জানান।
আলোচনায় ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট হার্জোগ গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি পুনরায় অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে খুব খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এটি ছিল মিত্রদের মধ্যে একটি বৈঠক, কিন্তু এটি একটি কঠিন বৈঠক ছিল।’
জাতিসংঘ গত মাসে গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে, যদিও এটি অনেক আগেই শুরু হয়েছিল বলে বিশ্বাস করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সেই সঙ্গে বিশ্বের গণহত্যা বিশেষজ্ঞদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস (IAGS) গাজায় গণহত্যা চলছে বলে প্রস্তাব পাস করেছে। তারা বলেছে, গাজায় ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে, তা সকল আইনি মানদণ্ড পূরণ করেছে।
এর আগে জুলাইয়ের শেষের দিকে স্টারমার ঘোষণা করেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় ‘শান্তির জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ না নিলে তার সরকার সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফ্রান্স, কানাডা এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য যোগ দেবে।
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য’ যুক্তরাজ্য ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
প্রতিবাদ
মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং ক্ষমতাসীন মধ্য-বাম লেবার পার্টিসহ যুক্তরাজ্যের অররধশাতাধিক আইনপ্রণেতা বলেছেন, সরকারের উচিত ছিল হার্জোগকে সফরের অনুমতি না দেওয়া।
হার্জোগ যখন পৌঁছান, তখন ডাউনিং স্ট্রিটের গেটের বাইরে বিক্ষোভকারী ‘গণহত্যা বন্ধ করুন’ স্লোগান দিচ্ছিলেন।
একজন বিক্ষোভকারী হার্জোগের গাড়িবহর চলে যাওয়ার সময় তার দিকে একটি লাল ধোঁয়ার ক্যানিস্টার ছুঁড়ে মারেন। গাড়িগুলো চলে যাওয়ার পর পুলিশ একজনকে আটক করে এবং ক্যানিস্টারটি সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ জেনোসাইড স্কলারস (IAGS) গাজায় গণহত্যা চলছে বলে জানালেও যুক্তরাজ্য এখনো এটি বলছে না।