
কাতারের দোহায় হামাস নেতাদের ওপর সম্প্রতি ইসরায়েলের চালানো বিমান হামলা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে ফোনে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় কাতার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা আনাদোলু মার্কিন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প এই হামলার ঘটনায় নেতানিয়াহুর প্রতি ‘তীব্র হতাশা’ প্রকাশ করেন। মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেন, দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা ছিল একটি ‘অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ’। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও জানান যে, মার্কিন সামরিক বাহিনী থেকে তিনি এই হামলার খবর পান, অথচ ইসরায়েল আগে থেকে কোনো তথ্য জানায়নি। এই হামলা এমন এক মিত্র দেশের ভূখণ্ডে চালানো হয়েছে, যারা গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। এর জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, হামলার সুযোগ খুবই সীমিত সময়ের জন্য ছিল, তাই তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন।
পরে তাদের মধ্যে আরেকটি ফোনালাপ হয়, যা প্রথমটির তুলনায় কিছুটা সৌহার্দ্যপূর্ণ ছিল। সেই ফোনালাপে ট্রাম্প জানতে চান হামলা সফল হয়েছে কিনা, কিন্তু নেতানিয়াহু নিশ্চিত কোনো উত্তর দিতে পারেননি। পরবর্তীতে হামাস জানায় যে, তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব ওই হামলা থেকে বেঁচে গেছেন, যদিও হামাসের পাঁচ সদস্য এবং একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আরও জানিয়েছে যে, ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প ক্রমেই নেতানিয়াহুর ওপর বিরক্ত হয়ে উঠছেন। এর কারণ হলো নেতানিয়াহু বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে না জানিয়ে একতরফা আগ্রাসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, যা ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-সংক্রান্ত লক্ষ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এদিকে, কাতার এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত কাজ’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে যে, ইসরায়েলের ‘বেপরোয়া আচরণ’ আর সহ্য করা হবে না। কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশর একসঙ্গে গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি বুধবার সিএনএনকে বলেন যে, দোহায় ইসরায়েলি হামলার জবাবে একটি আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত হচ্ছে। তিনি জানান, এ নিয়ে আরব ও ইসলামী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চল থেকে অবশ্যই প্রতিক্রিয়া আসবে। এটি বর্তমানে আমাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনার পর্যায়ে আছে।’