
ভেনেজুয়েলার ভেতরে সক্রিয় মাদক পাচারকারী চক্রের ওপর সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিকল্পগুলো বিবেচনা করছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনি পুয়ের্তো রিকোয় অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। খবর আল জাজিরা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সূত্রগুলো সংবাদ সংস্থাগুলোকে জানিয়েছে, ওয়াশিংটন কর্তৃক ‘মাদক-সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত লাতিন আমেরিকান পাচারকারী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পুয়ের্তো রিকোর একটি বিমানঘাঁটিতে পাঠানো হয়েছে।
সিএনএন একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর ওপর সামরিক হামলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এতে ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে ইতোমধ্যে তীব্র হয়ে ওঠা উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সহিংস শাসন পরিবর্তনের পরিকল্পনা’ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সার্বভৌমত্ব, শান্তি ও স্বাধীনতার অধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মান করা উচিত।’ ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে মাদুরো বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তবে তা কখনোই সামরিক সংঘাত ডেকে আনতে পারে না। ভেনেজুয়েলা সবসময়ই আলোচনার জন্য প্রস্তুত।’
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জেরে মাদুরো প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার সেনাকে একত্রিত করেছেন বলে দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, সংরক্ষিত সেনা ও মিলিশিয়া সদস্য মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার মোট বাহিনীর শক্তি আট মিলিয়নের বেশি। মাদুরো আরও সতর্ক করে বলেন, ‘যদি ভেনেজুয়েলাকে আক্রমণ করা হয়, তবে দেশ তাৎক্ষণিকভাবে সশস্ত্র সংগ্রামের পর্যায়ে প্রবেশ করবে।’
ট্রাম্প অবশ্য জানান, ভেনেজুয়েলায় শাসন পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে জানুয়ারির নির্বাচনে মাদুরোর পুনঃনির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল একটি অদ্ভুত নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলছি, যেটি হালকাভাবে বলা যায় না।’
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের খবর আসে এমন এক সময়, যখন ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভেনেজুয়েলার জলসীমার বাইরে মোতায়েন করা হয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, বিপুল মেরিন সেনা এবং একটি পারমাণবিক চালিত দ্রুতগামী সাবমেরিন।
বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর অভিযোগ করে, ভেনেজুয়েলা তাদের একটি গাইডেড-ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস জেসন ডানহামের কাছে দুটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে একটি ‘অত্যন্ত উসকানিমূলক’ পদক্ষেপ নিয়েছে। ডানহাম ক্যারিবীয় অঞ্চলে পাঠানো অন্তত সাতটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজের একটি, যেখানে ৪,৫০০-এর বেশি নাবিক ও মেরিন মোতায়েন রয়েছে।
পরে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলাকে সতর্ক করে বলেন, মার্কিন যুদ্ধজাহাজের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে কমান্ডারদের বিমান ভূপাতিত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, ‘যদি তারা আমাদের বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে, তবে তাদের গুলি করে নামানো হবে।’
গত মঙ্গলবার মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে একটি স্পিডবোট ধ্বংস করে, যা ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী ভেনেজুয়েলার অপরাধী সংগঠন ‘ট্রেন দে আরাগওয়া’-র ছিল। এতে ১১ জন নিহত হয়। তবে কারাকাস একে বেসামরিক মানুষের ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে এবং এর বৈধতা নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরাও প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের কৌশলের পক্ষে সাফাই গেয়ে মেক্সিকোতে বলেন, ‘যখন আপনি তাদের ধ্বংস করবেন, নির্মূল করবেন, তখনই তারা থামবে। যদি কোনো নৌকা কোকেন বা ফেন্টানাইল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আসে, তবে তা আমাদের জন্য তাৎক্ষণিক হুমকি।’