
পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকতে চেয়েছিল ছয় বছরের ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজব। আকুতি জানিয়েছিল সাহায্যের। শেষ মুহূর্তে ফোনে কথা হয়েছিল ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের সঙ্গে। ঘণ্টাব্যাপী শ্বাসরুদ্ধকর সেই ফোনকল নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘ভয়েস অব হিন্দ রজব’। ইতালিতে অনুষ্ঠিত ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সিলভার লায়ন’ পুরস্কার পেয়েছে সেটি।
ঘটনা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের। ইসরায়েলের হামলায় বিধ্বস্ত গাজা নগরী থেকে গাড়িতে করে পালাচ্ছিল হিন্দ রজবের পরিবার। তখন গাড়িটি হামলার শিকার হয়। নিহত হন গাড়িতে থাকা তার চাচা, চাচি, তিন চাচাতো ভাইবোন—সবাই। গাড়িতে আটকা পড়ে ওই ফোনকল করেছিল শিশুটি। পরে তাকেও গুলি চালিয়ে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
হিন্দ রজবকে সাহায্য করতে ঘটনাস্থলে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের দুই কর্মীকেও সেদিন ইসরায়েলের সেনারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন। ইসরায়েল যদিও দাবি করেছিল, ঘটনার দিন সেখানে তাদের কোনো সেনা ছিল না। তবে স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবি বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও স্কাই নিউজ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি ট্যাংক উপস্থিত ছিল।
ভয়েস অব হিন্দ রজব চলচ্চিত্রটিতে রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের সঙ্গে হিন্দ রজবের ফোনকলের আসল রেকর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন তিউনিসিয়া বংশোদ্ভূত ফরাসি পরিচালক কাউথার বেন হানিয়া। গত বুধবার ভেনিস উৎসবে চলচ্চিত্রটির প্রথম প্রদর্শনী হয়। সেদিন এটি এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে দর্শকেরা ২৩ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন।
এবারের ৮২তম ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হয় গত ২৭ আগস্ট। শেষ হয়েছে গতকাল শনিবার। এদিনই সিলভার লায়ন পুরস্কার পায় ভয়েস অব হিন্দ রজব। উৎসবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার এটি। ভয়েস অব হিন্দ রজব পরিবারের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন পরিচালক বেন হানিয়া। এ সময় তিনি বলেন, চলচ্চিত্রটি শুধু ছয় বছরের মেয়েটির কাহিনি নয়, গণহত্যার শিকার পুরো একটি সম্প্রদায়ের কাহিনি।
চলচ্চিত্র ছোট্ট শিশু রজবকে ফিরিয়ে আনবে না। তার সঙ্গে যে নৃশংসতা ঘটেছে, তা-ও মুছে ফেলা যাবে না—এভাবেই মনের কথাগুলো বলছিলেন হানিয়া। তিনি বলেন, যা চলে গেছে, তা তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার (রজব) কণ্ঠস্বর থেকে যাবে। যত দিন পর্যন্ত জবাবদিহি নিশ্চিত না হয়, ন্যায়বিচার না হয়, তার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে আসবে।
ভেনিস উৎসবে প্রথম পুরস্কার ‘গোল্ডেন লায়ন’ পেয়েছে মার্কিন পরিচালক জিম জারমুশের চলচ্চিত্র ফাদার মাদার সিস্টার ব্রাদার। শনিবার পুরস্কার গ্রহণের সময় তাঁর শরীরে ছিল ‘এনাফ’ লেখা একটি ব্যাজ। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘যথেষ্ট হয়েছে’। এই ব্যাজের মাধ্যমে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অবরোধ এবং নৃশংস বোমাবর্ষণের বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ভেনিস উৎসবের আগেই অস্কারের আন্তর্জাতিক ফিচার ফিল্ম বিভাগে তিউনিসিয়ার পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেয়েছে দ্য ভয়েস অব হিন্দ রজব। আগামী ৯৮তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালের ১৫ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। এর আগেও বেন হানিয়ার নির্মিত ‘ফোর ডটার্স’ ও ‘দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ স্কিন’—দুটি চলচ্চিত্রই অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিল।