
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলাকে সতর্ক করে বলেছেন, দেশটির সামরিক বিমান যদি মার্কিন নৌযানের দিকে এগিয়ে আসে তবে সেগুলো ‘গুলি করে ভূপাতিত করা হবে’।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি তারা বিপজ্জনক অবস্থানে উড়ে যায়, আমি বলব তারা সমস্যায় পড়বে।’
ক্যারিবিয়ান সাগরে দুটি ভেনেজুয়েলার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ‘কাছে দিয়ে উড়ে যাওয়ার’ একদিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্য এলো। এর আগে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ভেনেজুয়েলার এই পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ বলে বর্ণনা করে।
ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘আমরা চাই না ভেনেজুয়েলা বা অন্য কেউ, অথবা অন্য কোনো স্থান থেকে মাদক আসুক, তাই আমরা এ বিষয়ে কঠোর হব।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদক পাচারকারী চক্র পরিচালনা এবং তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যোগাযোগের অভিযোগ এনেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট যোগাযোগের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত আগস্ট মাসে ওয়াশিংটন কোকেন পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মাদুরোকে ‘ধরিয়ে দেওয়ার জন্য’ তথাকথিত পুরস্কার ঘোষণা করে। এর কিছুক্ষণ পরেই যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলের ক্যারিবিয়ান এবং জলসীমায় বেশ কয়েকটি জাহাজ ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করে।
দক্ষিণ ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন নৌবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই মাদুরো উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকা সামরিক হুমকির মাধ্যমে তার দেশের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন চাইছে।
উত্তেজনার মধ্যেই গত মঙ্গলবার মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়ে একটি স্পিডবোট ধ্বংস করেছে। ট্রাম্পের ভাষ্য, নৌকাটি মাদুরোর সঙ্গে জড়িত একটি অপরাধী সংগঠনের ছিল এবং হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন।
এরপর ভেনেজুয়েলা ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে। আইন বিশেষজ্ঞরাও এই হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ ট্রাম্প প্রশাসন এমন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে, জাহাজে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘আসন্ন হুমকির’ ছিল। এমনকি নৌকায় থাকা ব্যক্তিরা সশস্ত্র ছিল কিনা, তাও জানা যায়নি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অনেকের দৃষ্টিতে নৌকায় থাকা ব্যক্তিরা বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। এই আক্রমণকে মার্কিন বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখা হবে।
জাতীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুতি নেবে ভেনেজুয়েলা
মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের দিনই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আক্রমণ চালানো হলে জাতীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সংগঠিত সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, ভেনেজুয়েলার ভেতরে সক্রিয় মাদক পাচারকারী চক্রের ওপর সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে তিনি পুয়ের্তো রিকোয় অত্যাধুনিক এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান মোতায়েনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য মাদুরোর ক্ষমতা দুর্বল করা।
মাদুরো জোর দিয়ে বলেন, ‘যদি ভেনেজুয়েলাকে আক্রমণ করা হয়, তবে শান্তি, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও আমাদের জনগণের সুরক্ষার স্বার্থে যে কোনো স্থানীয়, আঞ্চলিক বা জাতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এটি একটি পরিকল্পিত ও সংগঠিত সশস্ত্র সংগ্রামে রূপ নেবে।’