
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২২ জনে। আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফত জামান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের কারণে কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে এবং শহীদ ও আহতদের সংখ্যা পরিবর্তন হচ্ছে।’ তিনি আরও জানান, কুনার, নানগারহার ও রাজধানী কাবুল থেকে চিকিৎসক দল ইতোমধ্যেই দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছে। তবে অনেক এলাকা থেকে এখনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এর আগে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও টেলিভিশন আফগানিস্তান (আরটিএ) নিহতের সংখ্যা ৫০০ বলে নিশ্চিত করেছিল। তালেবান সরকারের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, কেবল কুনার প্রদেশেই ‘শত শত মানুষ’ নিহত হতে পারেন। পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাতে ব্যাপক বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি জানায়, রিখটার স্কেলে ছয় মাত্রার এই ভূমিকম্পে বহু গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নানগারহার ও কুনার প্রদেশে আহত কমপক্ষে ১১৫ জনকে ইতোমধ্যেই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) গভীরে। এরপর আরও অন্তত তিনটি পরাঘাত অনুভূত হয়, যার মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৫ থেকে ৫ দশমিক ২-এর মধ্যে।
ইউএসজিএস তাদের মডেলিংয়ে সতর্ক করেছে, এ ভূমিকম্পে ‘বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা’ রয়েছে এবং বিপর্যয়টি ‘বিস্তৃত’। সংস্থার মূল্যায়নে বলা হয়েছে, এ ধরনের সতর্কতা স্তরের ভূমিকম্পগুলোতে সাধারণত জাতীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ের তৎপরতা প্রয়োজন হয়। যদিও প্রাথমিকভাবে ২০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল, পরে সংখ্যাটি দ্রুত বেড়ে যায়।
তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গভীর রাতে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে অসংখ্য ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বিশেষত কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার মাজার উপত্যকার ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এ উপত্যকা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত।
তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হাতে যথেষ্ট সম্পদ ও সরঞ্জাম নেই। তাই উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ও আন্তর্জাতিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। কুনার প্রদেশের পুলিশপ্রধান বিবিসিকে বলেন, প্রবল বন্যা ও ভূমিধসের কারণে সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থলপথে উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয়, কেবল আকাশপথেই তা চালানো যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রতি অবিলম্বে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।