
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (পেন্টাগন) ক্লাউড সেবা কার্যক্রম থেকে চীনা প্রকৌশলীদের বাদ দিচ্ছে মাইক্রোসফট। জাতীয় ও সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি কমাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তি বিষয়ক মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, চীনা প্রকৌশলীরা এখন থেকে পেন্টাগনের জন্য মাইক্রোসফটের ক্লাউড পরিষেবায় আর কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারবেন না।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) মাইক্রোসফট তাদের অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় পরিবর্তন আনে। কোম্পানির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ফ্র্যাঙ্ক শ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ক্লায়েন্টদের সহায়তায় এখন থেকে এমন সিস্টেম প্রযোজ্য হবে, যাতে চীনে অবস্থানরত কোনো ইঞ্জিনিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ক্লাউড সেবায় আর সম্পৃক্ত না থাকেন।’
এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে মাইক্রোসফটের অ্যাজিউর ক্লাউড সার্ভিস বিভাগে। বিশ্লেষকদের মতে, কোম্পানিটির মোট আয়ের ২৫ শতাংশের বেশি আসে এই বিভাগ থেকে। বর্তমানে অ্যাজিউর গুগল ক্লাউডের চেয়েও বড় হলেও এখনো অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের নিচে অবস্থান করছে।
মাইক্রোসফটের সর্বশেষ আয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ৭ হাজার কোটি ডলারের প্রথম ত্রৈমাসিক আয়ের অর্ধেকেরও বেশি আয় করেছে। সরকারি চুক্তিগুলো থেকে এ আয় এসেছে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মাইক্রোসফট এক হাজার কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি জিতলেও আইনি জটিলতায় তা ২০২১ সালে বাতিল করে পেন্টাগন। পরে ২০২২ সালে নতুন করে অ্যামাজন, গুগল, ওরাকল এবং মাইক্রোসফটকে নিয়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার কোটি ডলারের যৌথ ক্লাউড চুক্তি করে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ।
‘প্রোপাবলিকা’ নামের এক অনুসন্ধানী গণমাধ্যম তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের চীনা ইঞ্জিনিয়াররা যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্টদের জন্য ক্লাউড সেবা দিয়ে আসছিলেন, যদিও তা ‘ডিজিটাল এসকর্ট’ বা তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে নজরদারির আওতায় ছিল। কিন্তু এসব তত্ত্বাবধায়কের প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রকৌশলীদের তুলনায় ছিল অনেক কম, যা সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
প্রোপাবলিকার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এ ব্যবস্থায় চীন থেকে সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে, কারণ এমন স্পর্শকাতর ডেটা ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা কঠিন।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, ‘এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে বর্তমান ডিজিটাল হুমকির বাস্তবতায়।’ তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়াটি মূলত ওবামা প্রশাসনের সময়ের উত্তরাধিকার। বর্তমানে চলমান অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে প্রতিরক্ষা দপ্তর পুরো সিস্টেম পর্যালোচনা করবে।
তবে মাইক্রোসফট প্রাথমিকভাবে প্রোপাবলিকাকে জানিয়েছিল, তাদের কর্মী ও ঠিকাদাররা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিমালা অনুযায়ীই কাজ করে আসছেন। তবুও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট উদ্বেগের প্রেক্ষিতে কোম্পানিটি এখন আরও কঠোর ও নিয়ন্ত্রিত পন্থা গ্রহণ করছে।