
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহোরের ভেতরের দিকে একটা এলাকা ‘গুমটি বাজার’। এই প্রাচীন এলাকারই বাসিন্দা আসিফ ভাট সেদিন ‘দিল্লি দরওয়াজা’র দিক থেকেও যেতে পারতেন। তবে ১৭ এপ্রিল, ১৯২৯ সালে নির্মিত ওই ভবনের দিকে যাওয়ার জন্য তিনি অন্য একটা রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন।
উনবিংশ শতাব্দীতে খোঁড়া একটা পুকুরের দিক থেকে তিনি ওই ভবনটিতে পৌঁছান। ওই ভবনের সামনে পৌঁছে আসিফ ভাট আমাকে ফোন করে একটা একটা করে ইংরেজি অক্ষর পড়তে শুরু করেছিলেন–– “বি… এরপরে কয়েকটা অক্ষর ভেঙে গেছে, তারপর আছে ‘কে’.. আর… “
আমি নিজে তো ওই ভবনের সামনে যেতে পারিনি। কিন্তু ফোনে আসিফ ভাটের গলায় ওই কয়েকটা অক্ষর শুনেই বাকি অংশটা আমি নিজেই বলে দিয়েছিলাম–– ‘বুলাকী মল অ্যান্ড সন ব্যাংকার্স, লাহোর’।
তার আসল নাম ছিল বুলাকী মল, কিন্তু ইতিহাসবিদদের মতে তার নাম পরিচিত ছিল বুলাকী শাহ হিসেবে। সেই আমলের সবথেকে ধনী মহাজন
সেই আমলে সবথেকে ধনী মহাজন ছিলেন এই বুলাকী শাহ। সুদের বিনিময় তিনি ধার দিতেন মানুষকে।
একটি ব্লগে লেখা হয়েছে, বুলাকী শাহ-র যে রেজিস্টার ছিল, সেখানে বড় বড় জমিদারদের আঙুলের ছাপ ছিল অথবা তাদের দলিল জমা ছিল। তিনি কখনো কাউকে নিরাশ করতেন না।
“নারীদের জন্য তার পৃথক ব্যবস্থা ছিল। সসম্মানে সেখানে নারীদের বসিয়ে তাদের সমস্যার কথা শুনতেন তিনি। নারীরা তাকে যখন বলতেন যে বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠান আছে, তখন কেউ যদি গয়না বন্ধক রাখতেন তো লালা নিশ্চিন্ত হয়ে যেতেন।”
সেই সময়ে পাঞ্জাবের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ইতিহাসবিদ ইশতিয়াক আহমেদ ‘দ্য পাঞ্জাব ব্লাডিড, পার্টিশন্ড অ্যান্ড ক্লেনস্ড’ নামের তার বইতে লিখেছেন, সমাজের প্রতিটা অংশই কোনো না কোনো ভাবে মহাজনের কাছে ঋণী ছিল। কিন্তু এর মুসলমানরাই এই অর্থনৈতিক দুর্ভোগটা সবথেকে বেশি পোহাতেন।
তার কথায়, বুলাকী শাহ এই মহাজনী ব্যবস্থার মধ্যেও একজন ‘মহান’ উদাহরণ ছিলেন, যার সামনে সবথেকে বড় জমিদারও আসলে ঋণগ্রহীতা হিসেবেই বিবেচ্য হতেন।
মুনির আহমেদের বই ‘মিটতা হুয়া লাহোর’-এ মোচি দরওয়াজার বাসিন্দা হাফিজ মেরাজুদ্দিনকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, ১০০ টাকা ধার নিতে গেলে তিনি প্রথমেই তিন মাসের সুদটা কেটে নিতেন। সুদে ধার দিয়ে বুলাকী শাহ একরকম জবাই করতেন।
‘পুরানি মেহফিলেঁ ইয়াদ আ রহি হ্যয়’ বইতে আবদুল্লা মালিক লিখেছেন যে লাহোরের সবথেকে ধনী মহাজন বুলাকী শাহর কাছ থেকে বেশিরভাগ মুসলমান জমিদার আর নিম্নমধ্যবিত্ত কেরানী শ্রেণির মানুষই ঋণ নিতেন। এমনকি তার পরিবারের মধ্যেও অনেকে তার কাছে ঋণী ছিলেন।
“বুলাকী শাহর বাসভবনটা দেখে তো আমার দাদুও ভয় পেতেন। বুলাকী শাহ নামটায় আমার ভয় ধরে গিয়েছিল। একদিন আমি দাদুর হাত ধরে গুমটি বাজার দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি নিচে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎই দাদু থেমে গিয়ে বললেন, ‘বাবা, বুলাকী শাহকে সালাম দাও,” লিখেছেন আবদুল্লা মালিক।
তিনি বর্ণনা দিয়েছেন, বুলাকী শাহর নাম শুনেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তার দিকে তাকালাম, কিন্তু এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আমি পেচ্ছাপ করে ফেলি। এটা দেখে বুলাকী শাহ একটু হেসে ফেলেছিলেন, আর আমার দীর্ঘ জীবনের জন্য দোয়া করে এগিয়ে গিয়েছিলেন।
হাফিজ মেরাজুদ্দিনের কথায়, বড় বড় ধনীদের জমিও বুলাকী শাহের কাছে বন্ধক ছিল।
‘মিটতা হুয়া লাহোর’ বইতে রাজনীতিক ও আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ সৈয়দ করমানিকে উদ্ধৃত করে মুনির আহমেদ লিখেছেন যে বুলাকী শাহর কাছ থেকে যারা ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মিঞা মুমতাজ দৌলতানার বাবা খান বাহাদুর আহমেদ ইয়ার দৌলতানার নামও ছিল।
ইংরেজি সাময়িকপত্র ‘দ্য পাকিস্তান রিভিউ’-এর ১৯৭১ সালের একটি সংখ্যায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল যে ১৯২০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে “আমার দাদু হাজী আহমেদ বখশ, যিনি নিজেই একজন ফার্সি কবি ছিলেন আবার আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের বন্ধুও ছিলেন, তিনি (লাহোরে) নিজের ৬৫ কানাল জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই জমিটা ২০ হাজার টাকায় লাহোরের সবথেকে বড় মহাজন বুলাকী শাহের কাছে বন্ধক রাখা ছিল।”
‘কানাল’ হলো উত্তর ভারতের কিছু অংশ এবং পাকিস্তানে জমি পরিমাপের অন্যতম একক। মোটামুটিভাবে এক ‘কানাল’ ৫৪৪৫ বর্গফুটের সমান।
ওই প্রতিবেদনেই লেখা হয়েছিল, আমার পূর্বপুরুষদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে দেখে চিন্তিত হয়ে আল্লামা ইকবাল আমার দাদুকে জমি বিক্রি করার থেকে বারণ করেছিলেন।
“তিনি বলেছিলেন, যে কোনো ভাবে জমিটা বাঁচান। একটা ভালো উপায় হতে পারে গয়না বিক্রি করে দাও বা কোনো বাড়ি বিক্রি করে বুলাকী শাহর দেনাটা মিটিয়ে দাও। কিছুদিনের মধ্যে তোমার ছেলে পরিবারের আর্থিক সমস্যা মিটিয়ে নেবে,” লেখা হয় ওই প্রতিবেদনে।
“তবে কপালের দোষ এটাই, আমার দাদু ওই পরামর্শ মানেননি,” লিখেছিলেন ওই প্রবন্ধকার।
অসুস্থ মহাজনকে দেখতে গেলেই ঋণ মওকুফ
চিত্রসাংবাদিক এফই চৌধুরী ২০১৩ সালে ১০৪ বছর বয়সে মারা যান। ‘অব ওয়োহ লাহোর কহাঁ’ শীর্ষক তার একটা দীর্ঘ সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক মুনির আহমেদ।
ওই সাক্ষাতকারে মি. চৌধুরী বলেছিলেন যে লাহোরের অর্ধেক মুসলমান বুলাকী শাহর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন।
ওই সাক্ষাতকারেই মি. চৌধুরী বুলাকী শাহকে নিয়ে একটা কাহিনী জানিয়েছিলেন। গল্পটা কিছুটা এরকম– “একবার বুলাকী শাহ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তো একজন দেনাদার গেছেন তার শরীরের অবস্থা জানতে – ‘শাহজী কেমন আছেন আপনি’? তিনি জবাব দিলেন যে কে জানে কবে আমার দম শেষ হয়ে যাবে। তারপরেই তিনি মুনিম (ম্যানেজার) কে ডেকে বললেন, ও মুনিম এদিকে এসো, বলো তো এই চৌধুরী সাহেবে কত টাকা দেনা আছে?”
খাতাপত্র দেখে সে বলল অমুক সালে ২০০ টাকা ধার নিয়েছিলেন। শাহ বললেন, আচ্ছা, ওটা মাফ করে দাও, আমার শরীরের খোঁজখবর করতে এসেছেন। আরেকজন দেনাদার এল, তারও কতটা টাকা ধার আছে জানতে চাইলেন। মুনিম জবাব দিল দুই হাজার। মাফ করে দে, সুদ তো আমি পেয়েই গেছি।
“একে একে সবাই তাকে দেখতে আসছেন। কয়েক লাখ টাকা ধার নিয়েছেন, এমন একজনও এসে বললেন, ‘শাহজী, শুনলাম আপনি নাকি অসুস্থ! তিনি জবাব দিলেন, আরে হ্যাঁ.. পরমাত্মার ইচ্ছা! ১৫-২০ মিনিট হয়ে গেল.. আধাঘণ্টা কেটে গেল, তিনি আর বলেন না যে এঁর ধার-বাকি মাফ করে দাও।”
“নিজেই একসময়ে বললেন আচ্ছা, আপনি এবার আসুন, খোঁজখবর নিতে এসেছেন বলে অনেক ধন্যবাদ। ওই সময়ে এটা একটা চালু কথা ছিল যে বুলাকী শাহ ছোটখাটো দেনাদারদের ঋণ মাফ করে দিতেন, তবে বড়সড় অঙ্কের ঋণ যারা নিতেন, তাদের কোনও ছাড় ছিল না,” জানিয়েছিলেন চিত্র সাংবাদিক এফই চৌধুরী।
ধার-দেনার কিছু ঘটনা নিয়ে মামলাও হয়
বুলাকী শাহর কাছ থেকে যারা ঋণ নিয়েছিলেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে বিবাদ আদালত অবধিও গড়িয়েছিল। ওই মামলাগুলো খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায় যে তার কাছ থেকে শুধু মুসলমানরাই যে ধার নিতেন, এমনটা নয়।
‘সিভিল জাজমেন্টস’ শীর্ষক অক্টোবর ১৯০১-এর নথিতে ৯৬ নম্বর মামলার বিবরণ থেকে জানা যায় যে উনবিংশ শতকের শেষ দিকে বুলাকী শাহ টিজি একর্স নামে রেলওয়ের এক ইউরোপীয় কর্মকর্তাকে দেড় হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। প্রতি মাসে তিন শতাংশ হারে সুদ দিতে হতো তাকে।
মি. একর্স সুদের কিছুটা অংশ ফেরত দিয়েছিলেন, কিন্তু ঋণের মূল অঙ্ক সময়-মতো পরিশোধ করতে পারেন নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে সুদের হার অত্যধিক ধার্য করা হয়েছে।
কিন্তু এই মামলাটিই লাহোর হাইকোর্টে যখন ওঠে, সেখানে বিচারপতি হ্যারিস রায় দেন যে মি. একর্স তো ঋণ নেওয়ার সময় নিজেই সই-সাবুদ করে ধার নিয়েছিলেন, কোনো চাপ বা ধোঁকা দেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণ তো পাওয়া যায়নি।
বুলাকীমলের আবেদন মঞ্জুর করে আদালত আর তার ২০৬৫ টাকা পাওনা চুকিয়ে দেওয়ার আদেশ দেয়।
ব্রিটিশ আমলের মামলা-মোকদ্দমার আরেকটি সংকলন ‘অল ইন্ডিয়া রিপোর্টার’-এ দেখা যায় প্রধান বিচারপতি কেন্সিংটন এবং বিচারপতি শাহ দিন-এর আদালতে ১৯১৪ সালের দোসরা ফেব্রুয়ারি একটি মামলা উঠেছিল।
ঋণ নিয়েও শর্ত অনুযায়ী দুবছরের সুদ ফেরত না পাওয়ায় ডুনিচাঁদের বন্ধক রাখা সম্পত্তির দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন বুলাকী শাহ। হাইকোর্ট এটিকে অবশ্য বেআইনি বলে রায় দেয়।
বুলাকী শাহর ছেলে, নাতিদের বিলাসী জীবন
সাংবাদিক মজিদ শেখ একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি আমাকে বলেছিলেন যে বুলাকী শাহ একবার জানতে পারলেন যে তার ছেলে টবি বাজারে (বাজার-এ-হুসন্) মাঝে মাঝেই যাচ্ছে। তো এক রাত্রে তিনি নিজেই সেখানে চলে যান আর ছেলের মুখোমুখি বসেন।”
“নর্তকীদের যত নজরানা তার পুত্র দিচ্ছিল, বুলাকী শাহ তার দ্বিগুণ নজরানা দিচ্ছিলেন। শেষমেশ বাপ-বেটা দুজনে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছিলেন।”
“এরপরেই বুলাকী শাহর ছেলে বুঝে যান যে ওই বাজারে তার নিজের কোনো দাম নেই, নর্তকীদের তো নজর শুধু তার ধন-সম্পত্তির দিকে। ওই পথে আর যায়নি তার পুত্র। এর ফলে টবি বাজারের এতই ক্ষতি হয়েছিল যে সেখান থেকে কয়েকজন বুলাকী শাহর সঙ্গে দেখা করতে যায়।”
“মেহফিলে যত টাকা উড়িয়েছিল বাপ-বেটা, সেই পুরো অর্থ ফেরত দিয়ে তারা অনুরোধ করে যেন বুলাকী শাহ তার ছেলেকে আবারও টবি বাজারে যাওয়ার অনুমতি দেন। বুলাকী শাহ অর্থ ফেরত নিয়েছিলেন। তবে সেখান থেকে যারা দেখা করতে এসেছিলেন, তাদের চলে যেতে বলেন,” লিখেছিলেন সাংবাদিক মজিদ শেখ।
তিনি আরও লিখেছেন, “আমার মনে আছে যে আমার বাবা একবার বলেছিলেন (পাকিস্তান হওয়ার আগে) বুলাকী শাহের নাতি ‘লোটো শাহ’, অর্থাৎ রামপ্রকাশ বাবার সহপাঠী ছিলেন। তারা একসঙ্গে কলেজের ক্রিকেট টিমেও খেলতেন। লোটো আর পরবর্তীকালে সাংবাদিক হয়েছিলেন মজহার আলি – শুধু এই দুজন ছাত্রই নিজেদের গাড়িতে চেপে কলেজে আসতেন। লোটো শাহ সিল্কের পোশাক ছাড়া কিছু পরতেন না, আর মজহার আলি খদ্দর পরতেন।”
বুলাকী শাহর পরিবার লাহোর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়
দেশভাগের সময়ে বুলাকী শাহর পরিবারকে লাহোর ছেড়ে চলে যেতে হয়। ইতিহাসবিদরা লিখেছেন যে দাঙ্গায় ঋণগ্রহীতাদের নামের যে তালিকা ছিল, তার ছেঁড়া পাতা লাহোরের নর্দমায় পাওয়া গিয়েছিল।
মজিদ শেখ লিখেছেন, ভারতে গিয়ে বুলাকী শাহ তার কাছে থাকা তালিকার পাতাগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বলেছিলেন যে আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।
তবে ফকির সৈয়দ ইজাজুদ্দিন তার বই ‘দ্য বার্ক অফ আ পেন: আ মেমরি অফ আর্টিকালস অ্যান্ড স্পিচেজ’-এ লিখেছেন যে যত জমিদার তার কাছ থেকে দেনা করেছিলেন, প্রায় সকলেই জমি বন্ধক রেখেছিলেন।
সেইসব নাম লেখা মূল্যবান তালিকাটা তো ১৯৪৭ সালে ভারতে চলে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বুলাকী শাহ, তবে ঋণের শর্তগুলো তো থেকে গিয়েছিল সীমান্তের ওপাড়েই।
সানা মেহেরা ভারতের দেরাদুনে থাকেন। তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি, কিন্তু তিনি সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেছেন যে বুলাকী শাহ তার দাদু ছিলেন।
“তার শেষ উত্তরাধিকারী (আমার দাদি, শ্রীমতী বিজয়লক্ষ্মী মেহেরা) করোনায় মারা গেছেন। বিয়ের আগে তার নাম ছিল রামা কুমারী। সবসময়ে তিনি গুমটি বাজার, ভিক্টোরিয়া স্কুল, ননহাল হাভেলি সহ নানা স্মৃতিচিহ্নের কথা শোনাতেন আর নিজের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লাহোরে যেতে চাইতেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটা আর হয়ে ওঠেনি,” সানা মেহেরা লিখেছেন।
বিজয়লক্ষ্মী মেহেরার জন্ম হয় ১৯২৯ সালে, লাহোরে। এই বছরেই বুলাকী শাহ গুমটি বাজারে নিজের চারতলা বাসভবন নির্মাণ শেষ করেছিলেন।
‘লাহোর আওয়ারগি’ শীর্ষক বইতে মুস্তাসির হুসেইন তার্ড ওই ভবনটির বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, “বুলাকী শাহের রাজকীয় ইমারত যেন কোনো জাদুকরের তৈরি – যেখানে সিমেন্ট দিয়ে লতা-পাতা আর ফুলের তোড়ার কারুকাজ করা ছিল, খিলান দেওয়া বারান্দা ছিল। পুরোটা সাজানো হয়েছিল লোহার জাল দিয়ে। বারান্দার ভার ধরে রাখত যেসব থাম, সেগুলোও কী সুন্দর। আর সদর দরজার সৌন্দর্য দেখে প্রাণ ভরে যেত।”
কিছুদিন আগে যখন আসিফ ভাট ওই ভবনটিতে গিয়েছিলেন, সেখানে এখন জুতো তৈরি হয়। নিচে চারটে চামড়ার জিনিস বিক্রির দোকান আছে, আর একটা রং-রাসায়নিক এসবের দোকান।
আসিফ ভাট বলছিলেন লাহোরের গুমটি বাজারের যে জায়গায় ভগ্নপ্রায় ওই ভবনটির আশেপাশে যারা থাকেন, তাদের বেশিরভাগই বুলাকী শাহের সম্বন্ধে কিছু জানেন না।
অথচ এই শহরেরই অর্ধেক মানুষ এক সময়ে তার কাছে ঋণগ্রস্ত ছিলেন। – বিবিসি