
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিস্ময় বালক কাইরান কাজী সম্প্রতি স্পেসএক্স ছেড়ে ওয়াল স্ট্রিটের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিটাডেল সিকিউরিটিজে যোগ দিয়েছেন। তার এই পদক্ষেপ নিয়ে যখন বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে, তখনই স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মন্তব্যে নতুন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাস্ক বলেন, ‘এই প্রথম তার নাম শুনলাম!’
২০ আগস্ট ফরচুন ম্যাগাজিনে কাইরান কাজীর ক্যারিয়ার পরিবর্তন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ইলন মাস্ককে এক্স-এ প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি এ ঘটনা জানেন? উত্তরে মাস্ক দাবি করেন, এর আগে তিনি কখনো কাইরান কাজীর নাম শোনেননি। অথচ মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্পেসএক্সে যোগ দেওয়া এই কিশোর প্রতিভার অবদান প্রযুক্তি জগতে অনন্য।
স্পেসএক্সের স্টারলিঙ্ক বিভাগে কাজ করার সময় কাইরান এমন এক সফটওয়্যার তৈরিতে ভূমিকা রাখেন, যা স্যাটেলাইট পরিচালনা ও ইন্টারনেট পরিষেবার কার্যকারিতা বহুগুণ বাড়ায়। তার অবদানে লাখ লাখ ব্যবহারকারীর কাছে নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট পৌঁছে যায়। তা সত্ত্বেও মাস্কের এই অজ্ঞতা প্রযুক্তি মহলে অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে।
ফরচুনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কাইরান কাজী বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তরুণ মাত্র ১৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যাজুয়েট হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তার আগেই শৈশবে বয়সের তুলনায় জটিল বিষয় আয়ত্ত করা এবং সমস্যা সমাধানে অসাধারণ দক্ষতার জন্য আলোচনায় আসেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে বিভিন্ন গবেষণাগারে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন এবং এআই সম্পর্কিত প্রকল্পে অংশ নিয়ে গবেষকদের তাক লাগান। এমনকি ইন্টেল ল্যাবসেও তার ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
দুই বছর স্পেসএক্সে কাজ করার পর কাইরান জানান, তিনি এমন পরিবেশে কাজ করতে চান যেখানে ফলাফল এবং প্রতিক্রিয়া দ্রুত পাওয়া যায়। মহাকাশ গবেষণার প্রকল্পে যেখানে ফল আসতে বছরের পর বছর সময় লাগে, সেখানে পরিমাণগত ফিন্যান্স বা কোয়ানটিটেটিভ ফিন্যান্সে ফলাফল পাওয়া যায় প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে। এই কারণেই তিনি ওয়াল স্ট্রিটের সিটাডেল সিকিউরিটিজকে বেছে নেন।
বর্তমানে কাইরান কাজী প্রতিষ্ঠানটিতে ‘গ্লোবাল ট্রেডিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইঞ্জিনিয়ার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এআই ল্যাব ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে তিনি সিটাডেলকে বেছে নিয়েছেন। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, প্রতিষ্ঠানের মেধাভিত্তিক সংস্কৃতি এবং দ্রুত উচ্চ-প্রভাবশালী ফলাফলের সম্ভাবনা। তার মতে, পরিমাণগত অর্থনীতি একদিকে তার প্রকৌশল ও এআই-গবেষণার আগ্রহ পূরণ করছে, অন্যদিকে তাৎক্ষণিক ফলাফলের সুযোগও দিচ্ছে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে গবেষণাগারে ইন্টার্নশিপ, ১১ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ১৪ বছর বয়সে স্পেসএক্সে যোগদান এবং ১৬ বছর বয়সে ওয়াল স্ট্রিটের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার শুরু—কাইরানের এই যাত্রা প্রযুক্তি ও আর্থিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইলন মাস্ক ব্যক্তিগতভাবে তাকে না চিনলেও, কাইরান কাজীর গল্প এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
16-year-old prodigy Kairan Quazi is taking his next leap—not in Silicon Valley, but on Wall Street, where he’s joining Citadel Securities.https://t.co/ewg2O2Adb3
— FORTUNE (@FortuneMagazine) August 20, 2025