
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনের পর আত্মহত্যা করা এক কিশোরের বাবা-মা চ্যাটবটটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই এবং এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওপেনএআই জিপিটি-৪ও সংস্করণটি বাজারে আনার সময় মুনাফাকে মানুষের নিরাপত্তার চেয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকো স্টেট কোর্টে এই মামলা দায়ের করা হয়। ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইন গত ১১ এপ্রিল আত্মহত্যা করে। মামলায় বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে কয়েক মাস ধরে সে চ্যাটজিপিটির সঙ্গে আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছিল। অ্যাডামের বাবা-মা ম্যাথিউ ও মারিয়া রেইন অভিযোগ করেন, চ্যাটজিপিটি তাদের সন্তানের আত্মহত্যার প্রবণতাকে সমর্থন করেছে, আত্মহত্যার বিস্তারিত পদ্ধতি শিখিয়েছে এবং এমনকি কীভাবে ব্যর্থ আত্মহত্যার প্রমাণ লুকানো যায়, সে বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছে। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, চ্যাটবটটি একটি আত্মহত্যার চিঠি লেখার প্রস্তাবও দিয়েছিল।
মামলায় বলা হয়েছে, ওপেনএআই ২০২৪ সালের মে মাসে জিপিটি-৪ও সংস্করণটি চালু করে শুধু প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য নয়, বরং বাজারে নিজেদের আধিপত্য সুসংহত করতে। এই সংস্করণে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছিল, যা সংবেদনশীল বা মানসিকভাবে দুর্বল ব্যবহারকারীদের জন্য মারাত্মক হতে পারে। রেইন পরিবার অভিযোগ করেছে, এই ঝুঁকি জেনেও ওপেনএআই প্রযুক্তিটি উন্মুক্ত করেছে, যা শেষ পর্যন্ত অ্যাডামের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। তারা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের দুটি পরিণতি হয়েছে: ওপেনএআইয়ের বাজারমূল্য বেড়েছে, আর আমাদের ছেলে অ্যাডাম রেইন আত্মহত্যা করেছে।’
এই মামলার মাধ্যমে রেইন পরিবার চায়, ওপেনএআই যেন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের বয়স যাচাই বাধ্যতামূলক করে, আত্মহত্যার বিষয়ে কোনো অনুসন্ধানে জবাব না দেয় এবং মানসিক নির্ভরশীলতার ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে। তারা আরও বলেছে, কোম্পানিটি ইচ্ছাকৃতভাবে আর্থিক লাভকে ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
এদিকে, ওপেনএআই-এর একজন মুখপাত্র অ্যাডামের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন যে, চ্যাটজিপিটিতে এমন নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে, যা সংকটে থাকা ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধকারী হেল্পলাইনে পাঠাতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, দীর্ঘ কথোপকথনের ক্ষেত্রে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। ওপেনএআই ভবিষ্যতে আরও উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে তারা মামলার নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি।
এক ব্লগ পোস্টে ওপেনএআই জানিয়েছে, তারা অভিভাবকদের জন্য চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ চালু করার পরিকল্পনা করছে এবং মানসিক সংকটে থাকা ব্যবহারকারীদের বাস্তব সহায়তা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে এআই-চ্যাটবটগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, যেখানে বিশেষজ্ঞরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করছেন।