
বাঙালির জীবনের আনন্দ-বেদনাকে সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন বাংলা ভাষার কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে যখন ব্রিটিশের দৌরাত্ম্য সেসময় ১৯২৬ সালের ৩১ আগস্ট শরৎচন্দ্রের আলোচিত উপন্যাস ‘পথের দাবী’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাস প্রকাশের পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছিল। ফলে ১৯২৭ সালে বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার।
আগামী বছরের আগস্টে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা ‘পথের দাবী’ উপন্যাস প্রকাশের শতবর্ষ পূর্তি হবে। এ উপলক্ষকে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পরিচালক সৃজিত বানাচ্ছেন ‘এম্পেরর ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ নামের সিনেমা।
রোববার (৩১ আগস্ট) সিনেমাটির ঘোষণা দিয়েছেন নির্মাতা।
‘পথের দাবী’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচীকে সেই সময়ের এক বিখ্যাত বিপ্লবীর আদলে গড়েছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। সব্যসাচী ইংরেজদের নাকের ডগায় বসে একের পর এক বিপ্লবী কাজ করে যায়, কিন্তু তাকে ধরার সাধ্য ছিল না তৎকালীন শাসকের। ১৯২৬ সালের ৩১ আগস্ট শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হয়েছিল। যার জেরে ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পথের দাবী’ উপন্যাস নিষিদ্ধ হওয়া, সেই সময় কিংবা শাসকের বিরুদ্ধাচারণ আজও কীভাবে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়- এই বিষয়গুলোকে পটভূমিকায় রেখে ‘এম্পেরর ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ সিনেমার গল্প সাজিয়েছেন সৃজিত। এতে শরৎচন্দ্র ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশসহ ওই সময়ের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরাও থাকবেন চরিত্র হিসেবে।
সৃজিত বলেন, ‘পথের দাবীর রচনাকাল, সেই সময়ের রাজনীতি, উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনা এবং ব্যক্তিত্বদের নিয়েই সিনেমাটি বানাচ্ছি।’
‘এম্পেরর ভার্সেস শরৎচন্দ্র’ সিনেমাটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে এসভিএফ এবং দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়া।
সৃজিত বলেন, ‘সেই সময় শুধু বাংলার নয়, পুরো ভারতবর্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তার লেখা থেকে মঞ্চসফল নাটক হচ্ছে, সিনেমা হচ্ছে, তার উপন্যাস ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে বের হচ্ছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে। সেরকম সাফল্যের তুরীয় পর্যায়ে বসে সেই মানুষটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যেভাবে গর্জে উঠেছেন, সেটা ভীষণ ইন্সপায়ারিং।’
এরইমধ্যে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শেষ। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের নভেম্বরে শুটিং শুরু করবেন সৃজিত। ২০২৬ সালের ১ মে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। অভিনয়ে কারা থাকছেন, তা এখনই প্রকাশ করতে চাইছেন না পরিচালক। জানিয়েছেন, অভিনয়শিল্পী বাছাইপর্ব চলছে।
এর আগে, ‘পথের দাবী’ নিয়ে ১৯৭৭ সালে ‘সব্যসাচী’ নামে সিনেমা বানিয়েছিলেন পীযুষ বসু। তাতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। আরও ছিলেন সুপ্রিয়া দেবী, বিকাশ রায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, তরুণ কুমার প্রমুখ।
সৃজিত বলেন, ‘উত্তমকুমার অভিনীত সিনেমাটি শুধুই পথের দাবী উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছিল। আর আমার সিনেমায় ওই সময়ের বাংলা, বাংলার রাজনীতি, উপন্যাস নিষিদ্ধ হওয়া- এ বিষয়গুলো থাকছে। দুটো সিনেমার গল্পে কোনো মিল নেই।’