
দোহায় বিশ্ব দাবা র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চ্যাম্পিয়নশিপে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে ম্যাগনাস কার্লসেন। রাশিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার ভ্লাদিসলাভ আরতেমিয়েভের কাছে হারের পর রাগে ফেটে পড়েন নর ওয়েজিয়ান এই গ্র্যান্ডমাস্টার। ঘটনাটি ঘটে দোহায় চলমান বিশ্ব র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় দিনে।
আরতেমিয়েভের বিপক্ষে শুরুতে আক্রমণাত্মক ছিলেন কার্লসেন। কিন্তু এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মারাত্মক ভুল করে বসেন তিনি। সময়ও ফুরিয়ে আসছিল। শেষমেশ হাত বাড়িয়ে পরাজয় স্বীকার করেন কার্লসেন। খেলা শেষ হতেই ঝটপট চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান তিনি। কোট হাতে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যেতে থাকেন।
ঠিক সেই সময় কাছ থেকে তার ক্লোজ শট নিতে এগিয়ে আসেন পেছনে থাকা এক ফিদে-নিযুক্ত ফটোগ্রাফার। মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরই দর্শক ও ক্যামেরার সামনে দেখা যায় রাগান্বিত এক কার্লসেনকে। হঠাৎ ক্যামেরাটি ঠেলে সরিয়ে দেন তিনি। তার এই প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফিদের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
তবে এবারই প্রথম নয়। গত বছর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত বিশ্ব র্যাপিড অ্যান্ড ব্লিটজ চ্যাম্পিয়নশিপেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। ‘জিন্সগেট’ নামে পরিচিত সেই ঘটনায় কার্লসেনকে শাস্তি দিয়েছিল ফিদে কর্তৃপক্ষ। সেখানে আনুষ্ঠানিক পোশাকের বদলে জিন্স পরে খেলতে নেমেছিলেন কার্লসেন। নিয়মভঙ্গের অভিযোগে তাকে এক রাউন্ডে অংশ নিতে নিষেধ করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই সরে দাঁড়ান।

পরের দিন ব্লিটজ পর্বে ফিরে এসে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হন। দোহায় আসার আগে সংবাদ সম্মেলনে কার্লসেন খোলাখুলি স্বীকার করেছিলেন, ফিদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। তার ভাষায়, ‘আমি এখানে এসেছি কেবল আয়োজকদের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার জায়গা থেকে।’
এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি ফিদে। সংস্থাটির সিইও এমিল সুটোভস্কি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা ঘটনাটির ভিডিও দেখেছি। আপাতত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করব।’
সাম্প্রতিক কার্লসেনের উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাত্র কয়েক মাস আগে নরওয়ে চেসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন গুকেশের কাছে হেরে টেবিলে ঘুষি মেরে আলোচনায় আসেন তিনি। সব মিলিয়ে এক সময়ের বরফের মতো শান্ত কার্লসেন এখন আবেগে ভাসছেন বেশি। দাবা যেভাবে যুক্তির খেলা, তাতে তার এই আবেগ অনেকের কাছে বিস্ময়কর। তবে এটাও সত্য, খেলার প্রতি তার নিখাদ আগ্রহই তাকে এমন করে তোলে।