
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার জানুয়ারি থেকে আবারও কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই নতুন হার কার্যকর হবে। এরপর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) আনুষ্ঠানিক পরিপত্র জারি করবে।
অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। নতুন প্রস্তাবে গড়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা কমানোর কথা বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবটি এখনো তার কাছে পৌঁছায়নি। তবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কিছুটা কমানোর দাবি রয়েছে। সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, স্বল্প অঙ্কের বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি এবং বড় অঙ্কের বিনিয়োগে কম মুনাফা নির্ধারণ করা হবে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বা এর কম বিনিয়োগে মুনাফা বেশি এবং এর বেশি বিনিয়োগে হার কম রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে গত ৩০ জুন আয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকার নিয়মিতভাবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময় গড় মুনাফা কিছুটা কমিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ছয় মাস পর পুনরায় হার নির্ধারণের কথা জানানো হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর সেই ছয় মাসের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
আইআরডি সচিব মো. আবদুর রহমান খান বলেন, মুনাফার হার বাড়বে না কমবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থ বিভাগের সুপারিশ পাওয়া গেলে পরিপত্র জারি করা হবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বর্তমানে এতে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর শেষে মুনাফা ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং এর বেশি বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ১ জুলাইয়ের আগে এই হার ছিল ১২ শতাংশের বেশি।
এ ছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং বেশি বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে এ হার যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৩ ও ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে মুনাফা ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং বেশি বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের মেয়াদি হিসাবেও একই হারে মুনাফা দেওয়া হচ্ছে।
তবে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের সাধারণ হিসাবের মুনাফার হারে কোনো পরিবর্তন আসছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তুলনামূলক বেশি থাকায় বড় অঙ্কের সঞ্চয় সরকারি খাতে চলে যায়। হার কিছুটা কমলে সেই অর্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ফিরে আসবে, যা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার নিট ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর আগের ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট ঋণ ছিল ঋণাত্মক, প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবর শেষে সঞ্চয়পত্রে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা।