
পল্টন ময়দানে উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামে ইউনেক্স-সানরাইজ বাংলাদেশ ইন্টনারন্যাশনাল চ্যালেঞ্জ ব্যাডমিন্টনে অংশগ্রহণ করতে এসে সবার চোখে পড়েছেন ভারতীয় দুই নারী শাটলার আরোমা জাহিদ এবং ঈশিতা নেগির ওপর। এককের লড়াই সবার নজর কাড়ছিল ভিন্ন কারণে। দুই শাটলার খেলছেন আর তাদের মা বসেছেন কোচের চেয়ারে।
আরোমা জাহিদ-ঈশিতা নেগি খেলার ফাঁকে ফাঁকে তার মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। দুই শাটলারের কোচ হচ্ছে মা। শেষ পর্যন্ত ঈশিতা জিতেছেন আরোমার বিপক্ষে। জিতেও শান্তিতে নেই নেগির। দোতালায় গ্যালারিতে গিয়ে নেগি বলছিলেন তিনি আরও সহজেই জিততে পারতেন। কিন্তু নিজের কিছু ভুলের কারণে নাকি জয়টা বড় ব্যবধানে হয়নি।
নেগির কথার সময় মা জাংকি খুব ব্যস্ত। দিল্লিতে বসবাস করেন। গত বছর এসেছিলেন ঈশিতা। পদকও জয় করেছিলেন এই টুর্নামেন্ট থেকে। কিন্তু এবার তার মাকে নিয়ে এসেছেন। মাকে কোচ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ঈশিতা। মাও একজন ক্রীড়াবিদ। ঈশিতা বলছিলেন উতরাখান স্টেটের অ্যাথলেটিকসে পদক জয় করেছেন ঈশিতার মা। সেটা খুব আনন্দ নিয়ে বলছিলেন ঈশিতা। ‘আমার মা ক্রীড়াবিদ ছিলেন। আমিও ক্রীড়াবিদ। তার কারণেই আমি খেলোয়াড় হয়েছি।’
ভারতীয় নারী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় সাইনা নেহওয়াল, পিভি সিন্ধুদের মতো বড় খেলোয়াড় হয়তো হতে পারবেন না তারপরও নিজের সন্তানকে দেশ থেকে বিদেশে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভালো শাটলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। আরোমা জাহিদ বড় ঘরের সন্তান। আর্থিক সচ্ছলতা বেশ। বাবা ভারতীয় ক্রিকেটর দলের খেলোয়াড় ছিলেন বলে জানালেন আরোমা জাহিদ। ঈশিতার কাছে হেরে গেলেও মন খারাপ হয়নি আরোমার। ঈশিতাদের বাড়ি উত্তর প্রদেশ থেকে আরও একটু দূরে। ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে বসবাস করেন। আরও জাহিদের বাড়িও উত্তর প্রদেশে। কিন্তু তাদের বসবাস দিল্লিতে। সেখানেই লেখাপড়া করছেন।
এবারই প্রথম সানরাইজ চ্যালেঞ্জ ব্যাডমিন্টন খেলতে বাংলাদেশে এসেছেন। আন্তর্জাতিক পদক থাকলেও আরোমা নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চান। মায়ের কোচিংয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছেন। ‘মা তো আছেই আমি আরও ভালো ভালো কোচের অধীনেও অনুশীলন করি-বলছিলেন আরোমা জাহিদ। একটা স্বপ্ন নিয়ে ছুটছেন আরোমা। কন্যার স্বপ্ন পূরণ করতে মা-ও কন্যার সঙ্গে দেশ বিদেশ যাচ্ছেন। ‘আমাদের উত্তর প্রদেশে ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন আমার মা। হাতে খড়ি তার কাছে। আমার মা সব সময় আমার সঙ্গে বিদেশে ট্রাভেল করেন। আমার মা-ই আমার কোচ।’
আরোমার মা সনু সারওয়াত কোচের চেয়ারে বসে দেখলেন কীভাবে মেয়ে হেরে গেল। কিন্তু মন খারাপ হয়নি। খেলায় হার-জিত আছে। আজকে আমার মেয়েটা খুব ভালো খেলতে পারেনি। কিছু ভুল ছিল কাটিয়ে উঠবে। মেয়েকে দেখিয়ে মা বললেন, ‘আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে আগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আরোমা। প্রথমবার বাংলাদেশে এসেছি। দেখা যাক খেলা তো শেষ হয়ে যায়নি।’
এক জন আরেক জনের কাছে হেরেছেন। কিন্তু ছবি তোলার সময় দুই কন্যা আর দুই মা যেন একে অপরের কাছের মানুষ হয়ে গেলেন। হাসি মুখে খেলার কথায় মিশে গেলেন।