
২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপে রেকর্ড প্রাইজমানির ঘোষণা দিয়েছে ফিফা। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে রেকর্ড ৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়া দলগুলো পাবে ৯০ লাখ ডলার করে। রানার্স আপ দল পাবে ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এছাড়া যথাক্রমে ২ কোটি ৯০ লাখ ও ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার পাবে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা দল।
এছাড়াও অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দল পাবে বাড়তি ১৫ লাখ ডলার করে। এর আগে অতিরিক্ত টিকিট মূল্য নিয়ে সমর্থকদের তীব্র বিরোধিতার পর ফিফা জানিয়েছে, উত্তর আমেরিকায় হতে যাওয়া বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই ৬০ ডলার দামের টিকিট রাখা হবে। দলগুলো ৪০০ থেকে ৭৫০টির মতো ৬০ ডলার মূল্যের টিকিট নিতে পারবে। এই টিকিট মূল্যের ক্যাটাগরিকে ‘সাপোর্টার এন্ট্রি টায়ার’ নামে উল্লেখ করেছে ফিফা।
একদিকে, ২০২৬ বিশ্বকাপের ম্যাচ টিকিটের দাম কাতার আসরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যদিকে, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর প্রাইজমানি বাড়ছে ৫০ শতাংশেরও বেশি। একদিক থেকে খেলোয়াড় ও ফেডারেশনগুলো যেন উৎসবের আমেজে। অন্যদিকে সাধারণ সমর্থকদের পকেট ক্রমেই হালকা হচ্ছে। এই দুই বিপরীতমুখী বাস্তবতায় ফিফাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ফুটবল সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান টম গ্রেটরেক্স সরাসরি বলেছেন, ‘ফিফা যদি এত বেশি প্রাইজমানি দিতে পারে, তাহলে সমর্থকদের কাছ থেকে টিকিটের এমন অস্বাভাবিক দাম নেওয়ার কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না।’ তার ভাষায়, ফুটবলকে ব্যবসার কাঠামোয় বেঁধে রাখতে চায় ফিফা।
ফিফা বরাবরই বলে এসেছে, তারা একটি অলাভজনক সংস্থা। যারা ফুটবল উন্নয়নে তাদের আয়ের পুরোটা বিনিয়োগ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি নানা বিতর্কে জর্জরিত। কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ না দেওয়া, টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ থেকে শুরু করে ‘ফিফা পিস প্রাইজ’ দেওয়ার ঘটনাও ফিফার ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে ক্ষয় করেছে। বিশ্বকাপকে ঘিরে ফিফা যদি কিছু মানবিক পদক্ষেপ নিতে পারত, তাহলে হয়তো ফুটবল বিশ্বের চোখে তারা অন্তত কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভাবমূর্তি ফিরে পেত।
তবে বড় প্রশ্নটি এখনো ঝুলে আছে। এই আয়োজন কাদের জন্য? ফিফা যে মডেলটি দাঁড় করিয়েছে, তা মূলত নিজস্ব স্বার্থকেন্দ্রিক। তাদের আয় ও প্রাইজমানির বড় অংশ চলে যাচ্ছে সমৃদ্ধ ফুটবল ফেডারেশনগুলোর কাছে, যাদের অর্থের কোনো অভাব নেই। অথচ অনেক ছোট দেশ আছে, যারা ফিফার সামান্য সাহায্য ছাড়া একটি জাতীয় দলও গঠন করতে পারে না।
ফুটবল আজ বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু এর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ফিফা ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে সেই মানুষগুলোর কাছ থেকে, যারা স্টেডিয়ামে বসে, টেলিভিশনের সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা ফুটপাতের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এই খেলার প্রাণ জোগায়। বিশ্বকাপ পুরো পৃথিবীর মানুষের উৎসব। কিন্তু যখন সেই উৎসবে প্রবেশের টিকিটের দাম হয় আকাশচুম্বী, আর ফেডারেশনগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফুলে ওঠে প্রাইজমানিতে, তখন বোঝা যায়, ফুটবলের হৃদয়ে কোথাও একটা ফাটল ধরেছে। সেই ফাটল সারাতে হলে, ফিফাকে একবার তাকাতে হবে সাধারণ দর্শকদের দিকে, যাদের ছাড়া এই খেলাটির কোনো অর্থই থাকে না।