
কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের মধ্যকার সেই শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল এবং লিওনেল মেসির বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার ঐতিহাসিক মুহূর্তের তিন বছর পূর্ণ হলো বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর)।
ফুটবল বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম রোমাঞ্চকর এই ম্যাচটির মাধ্যমে অবসান ঘটেছিল আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের দীর্ঘ শিরোপা আক্ষেপের। ১৯৮৬ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে আসা দ্বিতীয় শিরোপার পর ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফুটবল জাদুকর মেসির হাত ধরে তৃতীয়বার বিশ্বসেরার মুকুট পরে আলবিসেলেস্তেরা। ফুটবল ইতিহাস বদলে দেওয়া সেই মহাকাব্যিক রাতের স্মৃতি এখনো ফুটবল প্রেমীদের মনে অমলিন হয়ে আছে।
২০২২ সালের সেই বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুটা আর্জেন্টিনার জন্য সুখকর ছিল না। আসরের দ্বিতীয় দিনেই সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের ধাক্কা খেয়েছিল তারা। তবে সেই হোঁচটই যেন দলটিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। গ্রুপ পর্বে মেক্সিকো ও পোল্যান্ডকে হারিয়ে নকআউট পর্বে পা রাখার পর একে একে অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পৌঁছায় স্কালোনির শিষ্যরা।
লুসাইলের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচের শেষ দিকে কিলিয়ান এমবাপের অবিশ্বাস্য জোড়া গোল এবং অতিরিক্ত সময়ে দুই দলের লড়াই ম্যাচটিকে ৩-৩ সমতায় নিয়ে যায়।
ম্যাচের শেষ মুহূর্তে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সেই অবিস্মরণীয় সেভ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হিসেবে স্বীকৃত। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানির নিশ্চিত গোলের শট মার্তিনেজ তাঁর বাম পা দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন।
এরপর টাইব্রেকারে মার্তিনেজের জাদুকরী পারফরম্যান্স এবং গঞ্জালো মন্তিয়েলের চূড়ান্ত শটে জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ এবং পরপর দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের যে ক্ষত ছিল, তা সেদিন লুসাইলের সবুজ ঘাসে মুছে গিয়ে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয়।
বিগত তিন বছরে আর্জেন্টাইন ফুটবলের চিত্রপট পুরোপুরি বদলে গেছে এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তারা ফুটবল বিশ্বে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছে। আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে লিওনেল মেসি ও তার দল এখন নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গতকাল ঐতিহাসিক এই অর্জনের তিন বছর পূর্তি পালন করেছে নীল-সাদা সমর্থকরা। আগামী বছর ১৮ ডিসেম্বর যখন এই দিনটি আবার ফিরে আসবে, তখন আর্জেন্টিনা হয়তো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব ধরে রাখার নতুন এক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামবে।