
এএফবি লাতিন বাংলা সুপার কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আজ দ্বিতীয় খেলা। বাংলাদেশের রেড গ্রিন ফিউচার স্টার এবং আর্জেন্টিনার অ্যাথলেটিকো চার্লোন ক্লাব আজ সন্ধ্যায় ৭টায় জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে। ৪২ বছর পর আর্জেন্টাইন কোনো দলের বিপক্ষে ফুটবল ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
১৯৮৩ সালে মালয়েশিয়ার নামকরা ফুটবল টুর্নামেন্ট মারদকো কাপ ফুটবলে আর্জেন্টাইন দল খেলেছিল। মেট্রোপলিটন একাদশ নামে আর্জেন্টিনা ফুটবল দল বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ৫-২ গোলে। সেই ম্যাচে খেলেছিলেন আসলাম, চুন্নুরা। সেই ম্যাচের স্মৃতির কথা আজও ভোলেননি শেখ মো. আসলাম।
আর্জেন্টিনার জালে গোল করেছিলেন আসলাম। ৪২ বছর আগের স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি আসলাম। আর্জেন্টিনার জালে বাংলাদেশের প্রথম গোলটি ছিল আসলামের। দ্বিতীয় গোলটি হয়েছিল পেনাল্টি থেকে। আসলামকে ঠেকাতে গিয়ে আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা ফাউল করেন। পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। আসলাম চেয়েছিলেন তিনি পেনাল্টি থেকে গোল করবেন। কিন্তু চুন্নু এসে বল বসিয়ে পেনাল্টি শট করেন, গোল করেন। আসলাম পেনাল্টিতে গোল করতে পারলে তার দুটি গোল হতো। কিন্তু চুন্নু এগিয়ে আসার কারণে আসলাম জোড়া গোলের স্বাদ নিতে না পারার আফসোস আজও ভুলতে পারেননি।
আজ আবার আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ফুটবলারদের লড়াই। আসলাম দেখতে চান তার উত্তরসূরিরাও আর্জেন্টিনার জালে গোল করেছেন। এই টুর্নামেন্টের প্রথম খেলায় ব্রাজিলিয়ান দল ক্লাব সাও বার্নাদোর বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশের রেড গ্রিন ফিউচার স্টার। একটা গোলও করতে পারেননি ফুটবলাররা। আফসোস রয়েছে আসলামের। আসলাম মূলত ব্রাজিলের ভক্ত। পেলের ভক্ত। তার চোখে পেলে ফুটবলের রাজা।
আসলামের বাবা শেখ আলী আহমেদও ছিলেন ফুটবলার, তিনি ঢাকার মাঠে কলকাতার মাঠেও ফুটবল খেলেছিলেন। আসলামের ছোট ভাই শেখ আসকর, শেখ আকরাম ঢাকার মাঠে ফুটবল খেলেছে। পুরো পরিবার ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের অনুরাগী। ঢাকায় খেলতে আসা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের প্রতিভা দেখে আসলামও খুশি। তবে বাংলাদেশ যদি গোল করতে পারতো, তাহলে আরও খুশি হতেন তিনি।
আজ আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের জালে গোল দেখতে চাইছেন আসলাম। আসলাম নিজে আর্জেন্টাইন দলের জালে গোল করেছিলেন। সেই গোলের স্মৃতির কথা এখনো জ্বলজ্বল করছে তার চোখে। ‘মধ্যমাঠ থেকে কাটিয়ে বল নিয়ে ঢুকেছিলাম। সবাইকে কাটিয়ে গোলকিপারকেও কাটিয়েছিলাম। গোলের পর
সবাই হতবাক। আমিও অবাক হয়েছিলাম সেদিন। দেখার মতো গোল ছিল। মারদেকা কাপের কথা বলছি। আমরা ৫-২ গোলে হেরেছিলাম’- বলছিলেন আসলাম।
আসলামের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ৭৭ সালে, ঢাকায় ভিক্টোরিয়ার স্পোর্টিং ক্লাবের জার্সি গায়ে। পরে বিজেএমসি, মোহামেডান এবং আবাহনী, মোহামেডান হয়ে আবাহনীতে গিয়ে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। কাজী সালাহউদ্দিনের পর ঢাকার মাঠে লিগের খেলায় দ্বিতীয় শততম গোলের মালিক আসলাম। পাঁচবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন আসলাম। তার গোলের ছবিগুলো পুরোনো দর্শকের চোখে আজও লেগে আছে।
কদিন আগে ঢাকা স্টেডিয়ামে ফিফা প্রীতি ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের হামজা চৌধুরীর বাইসাইকেল ভলিতে গোল করার দৃশ্য প্রশংসা কুড়িয়েছে। হামজা চৌধুরীর এ ধরনের গোল স্ট্রাইকার আসলামের ক্যারিয়ারে ছিল মামুলি ব্যাপার। ঢামফা কাপ ফুটবল, ফেডারেশন কাপ ফুটবল কিংবা লিগের ম্যাচে এসব দৃশ্য অহরহ দেখিয়েছেন আসলাম। ব্যাকভলি, বাইসাইকেল ভলি, পুরো শরীরকে বাতাসে ভাসিয়ে পাখির মতো উড়ে গিয়ে গোল করার নয়নাভিরাম দৃশ্যগুলোর ভিডিও সংরক্ষণ না থাকায় বর্তমান প্রজন্ম এসব অতীত ইতিহাস দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত।