
বহু প্রতীক্ষার পর শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২৬ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র। প্রথম বারের মতো ৪৮ দেশ নিয়ে ১২ গ্রুপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-খ্যাত ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা জন্য মধুর বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে আগামী ১২ জুন। উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামবে স্বাগতিক মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া।
১৯৩০ সালে প্রথম বারের মতো উরুগুয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। যেখানে প্রথম আসরে ১৬ দল নিয়ে মাঠে গড়িয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপ। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দলের সংখ্যাও। ১৯৮২ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসরে ১৬ দল থেকে ৮ দল বাড়িয়ে ২৪ দল নিয়ে মাঠে গড়িয়েছে টুর্নামেন্ট। এরপর ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসরে দলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২-এ। দল বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সবশেষ কাতার বিশ্বকাপের মধ্যে দিয়ে ৩২ দলের টুর্নামেন্টের ইতি ঘটেছে। ফুটবলে আরও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে ২০২৬ বিশ্বকাপে ৪৮ দল নিয়ে মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপ।
যদিও ৪৮ দল নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে, এই ঘোষণার পর থেকে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। অনেক ফুটবল বিশ্লেষকরা দাবি তুলেছেন, ৪৮ দল নিয়ে বিশ্বকাপে দল বাড়লেও উত্তাপ হারাবে টুর্নামেন্ট। ৪৮ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারে আসরে ৪২ দল ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছে বিশ্বকাপ খেলার টিকিট। বাকি আট দল আগামী মার্চে প্লে অফ খেলে জায়গা করে নিবে মূল পর্বে। প্রথম বারের মতো এবার বিশ্বকাপ খেলবে ৪ দেশ, তা চূড়ান্ত। তবে এখনো বাকি আছে প্লে অফ।
বিশ্বকাপের আগের আসরগুলোতে গ্রুপপর্ব থেকে শুরু হয়েছে উত্তেজনা, ছড়িয়েছে রোমাঞ্চ। গ্রুপপর্ব থেকে কারা যাবে রাউন্ড ষোলোতে। তা নিয়ে করতে হয়েছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। গতকাল ড্র-য়ের পর হতাশ হয়েছে অনেক ফুটবল সমর্থকরা। কেননা গ্রুপ পর্বে থেকে কারা নিশ্চিত করে রাউন্ড অব ৩২-এর টিকিট, তা আগে থেকে অনুমান করা যাচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ গ্রুপে লড়াই করবে চার মহাদেশের চারটি দেশ, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকা। এসবের মাঝে ২০৩৪ বিশ্বকাপ থেকে ৬৪ দল নিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। ফিফা। যদিও সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।
ব্রাজিলের আগে পর্তুগালের সঙ্গে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বে তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করবে এবং গ্রুপ ‘জে’ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাউন্ড অব ৩২-দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে আলবিসেলেস্তেদের। সেখানে মেসি, আলভারেজ, মার্টিনেজদের প্রতিপক্ষ হবে এইচ গ্রুপের রানার্সআপ। সেখানে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সম্ভব্য প্রতিপক্ষ স্পেন বা উরুগুয়ে। তবে এই বিষয় নিয়ে এখনই ভাবতে চান না আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপজয়ী এই কোচ বলেন, আমরা যদি স্পেন ও উরুগুয়ের গ্রুপের বিপক্ষে পড়ি, অবশ্যই কঠিন হবে। এই ম্যাচ-আপ বেশ কঠিন। তবে আমাদের সামনে দেখতে হবে। এটাই চূড়ান্ত নয়। আমাদের সামনে যা আসবে, তা-ই। আমরা তো নিজেদের পছন্দমতোই চাইব। তবে বাস্তবতার সঙ্গে লড়তে হবে আমাদের।’

অন্যদিকে ‘সি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাউন্ড অব ৩২-এ যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে ব্রাজিল। এমনটি হলে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের নক আউটে প্রতিপক্ষ হবে ‘এফ’ গ্রুপের রানার্সআপ দল। যেখানে থাকতে পারে নেদারল্যান্ড বা সূর্যোদয়ের দেশ জাপান। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দুই দল যদি রাউন্ড ১৬ ও শেষ ৮-এর বাঁধা অতিক্রম করতে পারে, তাহলে সেমিফাইনালে দেখা হতে পারে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর। ব্রাজিলের আগে রোনালদোর পর্তুগালের সঙ্গে দেখা হতে পারে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার।
বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালকে গ্রুপ পর্বে বড় কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না বলেই ধারণা করা যায়। দুটি সম্ভাব্য পথে আর্জেন্টিনা-পর্তুগালের মুখোমুখি হওয়ার বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমবার তাদের দেখা হতে পারে ১১ জুলাই কানসাস সিটিতে কোয়ার্টার ফাইনালে। এক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকান ও ইউরোপিয়ান দলকে তাদের গ্রুপ পর্বের শীর্ষে থাকতে হবে এবং শেষ ৩২ ও ১৬-এর বাঁধা পার করতে হবে। এমনটি হলে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হতে পারে মেসি-রোনালদোর। যদি দুই দলই যদি নিজেদের গ্রুপে রানার্সআপ হয় এবং শেষ ৩২ টপকে গেলে শেষ ষোলোতে হবে তাদের লড়াই। আগামী ৬ জুলাই ডালাসে হবে ম্যাচটি।