
শিল্পায়নের গতি থমকে যাওয়ায় দেশে কমপক্ষে ১৪ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ। তিনি বলেছেন, শিল্পায়নের অভাবে চাকরি হারিয়েছে ১৪ লাখ মানুষ, যারা রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের চাকরি নেই। প্রতিবছর ৩০ লাখ মানুষ নতুন করে চাকরিতে আসে। এক লাখ ২০ হাজার লোক সরকারি-আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পায়, ৮ লাখ বিদেশে এবং ১০ লাখ বেসরকারি খাতে চাকরি পায়। বাকিরা বেকার থাকে। কিন্তু এ খাতে নতুন করে কর্ম সৃষ্টি হচ্ছে না, যার ফলে কর্মসংস্থান হচ্ছে না, বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দৈনিক বণিক বার্তা।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ২৩ নভেম্বরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত বছর জিডিপি ছিল ৪ দশমিক ২২, যা এ বছরে কমে হবে ৩ দশমিক ৯৭। অর্থাৎ আগের চেয়ে জিডিপি কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আরও বলছে, ক্ল্যাসিফাইড লোনের সংখ্যা ২৪ শতাংশ। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। কেননা সাধারণ মানুষকে ডিভিডেন্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করে না। ক্লাসিফাইড করলেই টাকাটা ডিভিডেন্ডে রাখতে হয়, ফলে প্রবেশন কমে যায়। সে কারণে এটিকে যদি গড়ে আমরা ৩৫ শতাংশ ধরি, সেটা কোথায় গেল জানা উচিৎ। বিষয়টি আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। আমরা আশা করছি, আগামীতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবেন। আপনারা খুঁজে বের করবেন টাকাগুলো গেল কোথায়, কে নিলো? তারপর তাদের আইনের আওতায় সোপর্দ করবেন।
বেসরকারি খাতের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুদ্রা সংকোচনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কঠোর হস্তে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে সুদের হার বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতে। এতে বেসরকারি খাত বড় হতে পারছে না। আমরা ঋণ পেয়েছি মাত্র ৬ শতাংশ। শিল্পায়ন অবস্থা খুবই খারাপ। ট্রেডিংয়ের জন্য দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে না। গত বছর এমনিতে দেশে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কম হয়েছে, এ বছর তার চেয়ে ২৬ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে।
সাবেক স্বতন্ত্র এমপি এ. কে. আজাদ বলেন, সরকার রেভিনিউ থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে পারছে না। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে। সরকার ব্যাংক থেকে ২৭ শতাংশ ঋণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি এনার্জি ক্রাইসিস মোকাবিলা করছি। আমাদের ৭ দশমিক ৮০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস রিজার্ভ আছে। প্রতি বছর আমাদের চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস। এর ৩০ শতাংশ আমদানি, বাকি ৭০ শতাংশ রিজার্ভ থেকে ব্যবহার করি। এতে করে ৯ শতাংশ গ্যাস রিজার্ভ লেভেল নিচে নেমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে গ্যাস রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। তখন পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হতে হবে আমাদের। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা হতাশ।
অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএসএমএ’র সভাপতি ও জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন প্রমুখ।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সঞ্চালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।