
বিশ্ববাজারে সোনার দাম আরও কিছুটা কমেছে। গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের সময় সোমবার (২৪ নভেম্বর) আউন্সপ্রতি সোনার দাম ‘৩৩ ডলার’ কমেছে। নিউইয়র্কের সময় অনুযায়ী, রাত ১১টার সময় সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৫০ ডলার ৪৩ সেন্ট।
বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থা বলছে, আগামী কিছুদিন সোনার দাম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে; দাম একেবারে কমে যাবে না, আবার অনেকটা বেড়েও যাবে না। চলতি বছর সোনার দাম একটানা অনেক দিন বাড়ার পর সম্প্রতি কিছুটা কমলেও, তা সত্ত্বেও সোনার দাম এখন পর্যন্ত আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ডলারের ওপরে রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বেশ কিছু কারণে সোনার দাম সীমিত পরিসরের মধ্যে থাকবে। বিনিয়োগকারীরা বেশ কিছু অর্থনৈতিক সূচকের দিকে তাকিয়ে আছেন। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন শাটডাউন থাকার কারণে কী পরিস্থিতি হয়, সেদিকে নজর রাখছেন তারা। সেই সঙ্গে দেশটির মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কী দাঁড়ায়, সেদিকেও বিনিয়োগকারীদের তীক্ষ্ণ নজর।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার হ্রাস-বৃদ্ধি করে কি না। ডিসেম্বর মাসে ফেডের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক রয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে, অর্থাৎ আগামী এক মাস সোনার দাম খুব বেশি ওঠানামা করবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহারের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য সাপ্তাহিক কর্মসংস্থানের হার, ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস, উৎপাদনবহির্ভূত খাতের পিএমআই ইত্যাদি সূচকগুলোও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ডিসেম্বর মাসে ফেডের নীতি সুদহার ঘোষণার আগে সোনার দাম স্থিতিশীল থাকবে।
সোনার দাম হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি যে বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ডলারের বিনিময় হার। দ্য অ্যালয় মার্কেটের প্রধান নির্বাহী ব্র্যান্ডন অ্যাভেরসানো বলেন, আপাতত সোনার দাম স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা বেশি হলেও একটি কারণে দাম হঠাৎ কমে যেতে পারে; সেটা হলো—ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো মার্কিন ডলারের আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠা।’ এতে সোনার চাহিদা কমে যেতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা তখন মার্কিন ডলারভিত্তিক ‘বন্ডের’ দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন। সেটা হলে সোনার দাম আবার কমে যেতে পারে বলে খবর ইনভেস্টোপিডিয়ার।
এ বছর সোনার দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং ইতিহাসে এই প্রথম আউন্সপ্রতি দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অ্যাভেরসানোর মতে, মূলত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই সোনার দামে এই উল্লম্ফন ঘটেছে। পাশাপাশি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নিয়ে উদ্বেগ এবং অন্যান্য মুদ্রার দুর্বলতার কারণেও সোনার এই দাম বৃদ্ধি।
তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও নিশ্চিত সম্পদ হিসেবে সোনা কেনে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ‘রেকর্ড পরিমাণ’ সোনা কিনছে, যেমন: চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি কয়েক বছরে নজিরবিহীন পরিমাণে সোনা কিনেছে। ফলে বাজারে সোনার সরবরাহ কমে যাচ্ছে এবং সে কারণে দাম বেড়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সরকার—সবাই মনে করে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে অন্তত সোনার দাম অক্ষুণ্ন থাকবে।
উদাহরণ হিসেবে ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের কথা বলা যায়, যখন প্রায় সব সম্পদের দাম কমলেও (সরকারি বন্ড ছাড়া) সোনার দাম বরং ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছিল। উল্লেখ্য, বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়লে দেশের বাজারে বাড়ানো হয়, আবার বিশ্ববাজারে দাম কমলে দেশের বাজারে কমানো হয়।