
আর্থিক সংকট যেন কাটছেই না। এত বছর পর প্রথমবার প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েও মোহামেডানের ঘর যেন টানাটানির সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। খেলোয়াড়রা বেতন পাচ্ছেন না। কোচিং স্টাফরাও বেতন পাচ্ছেন না। বিদেশি ফুটবলাররা বারবার বেতনের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত করছেন না ফুটবলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এবং ক্লাবের পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর।
আগামীকাল লিগের ম্যাচ কুমিল্লায়। মোহামেডান-আবাহনী লড়াই। গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর নাকি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি আজকের ম্যাচের পর কথা বলতে রাজি না। ক্লাবের বিভিন্ন সূত্রের খবর হচ্ছে-আলমগীর সাহেব বিরক্ত।
গত ৮ নভেম্বর ঢাকা ক্লাবে মোহামেডানের অতিরিক্ত সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে ফুটবলের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরেছিলেন। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে চলবে তা নিয়ে ক্লাবের সংকট তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সেই অতিরিক্ত সাধারণ সভা পর্যন্তই শেষ। এখনো নাকি খেলোয়াড়রা তাদের বেতনই পাননি। ফুটবলারদের কথা হচ্ছে কবে হবে নির্বাচন, তার আগ পর্যন্ত কীভাবে চলবে ফুটবল ক্যাম্প, সেই পরিকল্পনা না নেওয়া হলে খেলোয়াড়রা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন।
২৯ জন দেশি ফুটবলার, ৪ জন বিদেশি ফুটবলার রয়েছেন। তারা সবাই বকেয়া বেতনের অপেক্ষায়। খেলোয়াড়রা বলছেন, ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর স্যার আমাদের সমস্যা সমাধান করবেন, এমনটা ধরে নিয়েছিলাম। আমরা আশায় ছিলাম একটা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’ খেলোয়াড়রা অনুশীলন করছেন, একই সঙ্গে তারা নিজেদের বেতন দাবি করছেন।
আজকে কুমিল্লায় যাবেন। আর এক-দুই ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন খেলোয়াড়রা। তারা অনুশীলন ঠিক রেখেই নীরব আন্দোলন করছেন, বেতনের জন্য। খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করার পর মাত্র ২৫ ভাগ পারিশ্রমিক পেয়েছেন তারা। বিদেশিরাও বকেয়ার দাবিতে ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবের কাছে বারবার যাচ্ছেন। বিদেশিরা নিয়মিত বেতন না পেলে বেঁকে বসেন। নকিব-আলফাজদের ভয় হচ্ছে বিদেশিরা যদি ফিফায় নালিশ করে বসে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
এরই মধ্যে একজন ফুটবলারের বকেয়া নিয়ে ফিফায় নালিশ জমা রয়েছে এবং এতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ফিফা। আর্থিক সংকট নিয়ে ফুটবল টেকনিক্যাল কমিটি অনলাইনে সভা করেছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। সংকটকালীন নানা প্রয়োজনে টাকা দিয়েছেন ম্যানেজার নকিব। টাকা দিয়েছেন কানন। ক্লাবের সভাপতি জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন (অব.) তার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তিনি অসুস্থ থাকার পরও ক্লাবের জন্য প্রয়োজনে অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে মোহামেডানের একাধিক কর্মকর্তার দাবি ‘ফুটবলের দায়িত্বটা ছিল ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের ওপর। তিনিও সংকটকালীন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এখন সেটা এড়িয়ে যাচ্ছেন। মোহামেডানের জার্সিতে আলমগীর সাহেবের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থাকছে। মোহামেডান থেকে তিনি বাফুফের কাউন্সিলর হয়েছেন। ফুটবলকে উনি পৃষ্ঠপোষকতা করবেন বলেই সবকিছুতে ফুটবল চেয়ারম্যানকে এগিয়ে রাখা হয়।’ দলের খরব রাখেন না ফুটবল কমিটির সম্পাদক আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স। এ বিষয়ে ক্লাবের অন্যতম পরিচালক প্রিন্স বলেছেন ‘কি খবর রাখব? আমরা খবর রাখি। দেশের অবস্থাই তো ভালো না। সংকট চলছে। প্রত্যেকটা ক্লাবেরই একই অবস্থা। আমরা আশা রাখি সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন। সম্পাদক খোঁজ রাখছেন না। তাই ফুটবল পরিচালনার জন্য তৈরি এই কমিটি এক প্রকার অকার্যকরই হয়ে পড়েছে। ক্লাব সূত্রের দাবি মোহামেডান ফুটবলাররা বেতন না পেয়ে সুযোগ পেলেই খ্যাপ খেলছেন। নিয়মিত বেতন না পেলে এমনটি করেন। এসব সংকট নিয়ে গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
এবার লিগের ট্রফি ধরে রাখার মতো দল গঠন করেনি মোহামেডান। তার ওপর আর্থিক সংকট মোহামেডানকে ভোগাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আবার তলানিতে গিয়ে ঠেকবে তাদের ফুটবল দল। তবে আশার কথা হচ্ছে ফুটবলাররা এত সংকটের মধ্যেও অনুশীলন করেছেন এবং ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন। এই ধৈর্য কতক্ষণ থাকবে-সেটাই এখন প্রশ্ন।