
২২ বছর পর ভারত জট ভেঙেছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামের গর্জনমুখর রাতটি স্মরণীয় হয়ে আছে শেখ মোরসালিনের জয়সূচক গোলের জন্য। তবে সেই গোলের পেছনে সবচেয়ে বড় কারিগর ছিলেন উইঙ্গার রাকিব হোসেন। দুর্দান্ত ছন্দ, তীব্র গতি আর নিখুঁত অ্যাসিস্ট দিয়ে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি তৈরি করেছেন এই ২৭ বছর বয়সী তারকা।
তবু আলোটা বেশি পড়েছে গোলদাতা মোরসালিনের ওপর; রাকিব আবারও থেকেছেন স্বভাবসুলভ নীরবতায়। জাতীয় দল ও বসুন্ধরা কিংসের এই উইঙ্গার ম্যাচের পর জানিয়েছেন ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়, নিজের পারফরম্যান্স এবং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। রাকিব জানান, ম্যাচ শুরুর আগেই তাদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট, ২২ বছরের অপেক্ষা ভাঙতেই নামছেন মাঠে। বলেন, ‘আমরা তো অনেক দিন পরে ইন্ডিয়াকে হারাইছি। দেশের মানুষের একটা আশা ছিল-আমরা যেন ইন্ডিয়াকে হারাই। শেষ পর্যন্ত সেটা পারছি, ভালোই লাগছে।’

গোলের অ্যাসিস্ট প্রসঙ্গে রাকিব জানান, মোরসালিনের দৌড় তিনি আগেই অনুভব করেছিলেন। তার ভাষায়, ‘আমি বল নিয়ে দৌড়ানোর সময় মোরসালিনকে ফলো করছিলাম। সে সুন্দর রান করেছে, বল দিয়া ওয়েট করেনি এটাই অনেক বড়। মোরসালিন না এগিয়ে এলে ঐ পজিশন থেকে গোল হতো না।’ জয়ের পর উদযাপনে ছিল বেশ প্রাণবন্ত। মাঠ থেকে শুরু করে ড্রেসিং রুম, তারপর টিম হোটেল সব খানেই লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা উদযাপন করেই কাটিয়েছেন।
তবে এই জয় পাওয়ার পেছনে দলকে আত্মবিশ্বাসী করার সবচেয়ে বড় অবদান ছিল বাংলাদেশ ফুটবলের পোস্টার বয় হামজা চৌধুরীর। সবশেষ ১৩ নভেম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচে জয়ের খুব কাছাকাছি থাকলেও ম্যাচ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে গোল হজম করে বসেন জামাল-হামজারা। তারপর সবাই খানিকটা ভেঙে পরেন। তবে সেই সময় সবাইকে মানসিক ভাবে শক্তি জুগিয়েছেন হামজা। ড্রয়ের পর তিনি পুরো দলকে বলেছিলেন মূল লড়াই ভারতের ম্যাচেই। রাকিব বলেন, ‘হামজা ভাই বলছে-ইন্ডিয়া এমন টিম না যে হারানো যাবে না। সবাই বেস্ট দিলে জেতা সম্ভব। সেটাই আমরা করে দেখিয়েছি।’

ভারতকে হারানোর পর দেশের প্রত্যাশা আরও বেড়েছে, কিন্তু রাকিব চাপ অনুভব করছেন না। ‘আমরা চাপ না, এনজয় করছি। সামনে ম্যাচগুলো আছে ডে বাই ডে ভালো করতে চাই।’ এএফসি বাছাইয়ের শেষ ম্যাচে হলুদ কার্ডে খেলতে না পারার আক্ষেপও আছে তার। তবে ভারতের বিরুদ্ধে জয় সেই কষ্ট কিছুটা কমিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাকিব।
ভারতের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি ফুটবল দর্শকদের চোখে লেগে আছে। রাকিব এবং মোরসালিন দুজনই বারবার গোলটি দেখেছেন। ভিডিও ফুটেজে টেনে গোলটা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তারা একটা পরিকল্পনাও করেছেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এ ধরনের গোল আরও করতে চান। ভারতের বিপক্ষে পাওয়া গোলটা একদিকে তাদের মধ্যে মজবুত ভিত তৈরি করেছে।

অন্যদিকে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে দুজনের। রাকিবের স্পিড, আর মোরসালিনের গোলক্ষুধা-দুটোর সংমিশ্রণে প্রতিপক্ষের জালে বল রাখা যায় কীভাবে সেটি নিয়ে দুজনের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া হয়েছে। ক্লাব ফুটবলে মোরসালিন আবাহনীতে, রাকিব বসুন্ধরা কিংসের হলেও তারা জাতীয় দলে এখন এক আত্মা। মোরসালিন বলেছেন, গোলের কৃতিত্ব রাকিব ভাইয়ের। তবে পারফেক্ট টাইমিং, পারফেক্ট গোল।’