
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভয় পান না এবং তাদের সম্পর্ক ‘গঠনমূলক’।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সম্প্রতি রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের বহু অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন হলেও ওয়াশিংটনে গত অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল না। জেলেনস্কির ভাষায়, ‘তিনি (ট্রাম্প) কিছু ছুড়ে মারেননি, আমি নিশ্চিত।’ তিনি বলেন, বৈঠকটি ছিল ‘স্বাভাবিক, ব্যবসায়িক এবং গঠনমূলক’, যেখানে মূল আলোচ্য ছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও মস্কোর সামরিক শক্তি দুর্বল করার উপায়।
জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্বের সবাই ট্রাম্পকে ভয় পায়—এটা সত্য।’ তবে নিজের ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘না… আমরা আমেরিকার শত্রু নই। আমরা বন্ধু। তাহলে ভয় পাব কেন?’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমেরিকা বহু বছর ধরে, হয়তো আরও বহু দশক বা শতাব্দী ধরেই আমাদের কৌশলগত অংশীদার।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস কিয়েভ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্ক উন্নয়নে নীরব হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প রাজাকে সম্মান করেন এবং তাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তার মহিমা আমাদের জনগণের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল।’
জেলেনস্কি আরও জানান, কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে ২৭টি প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে চায় এবং ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে নিজেদের সিস্টেমগুলো সাময়িকভাবে দিতে আহ্বান জানিয়েছে। পশ্চিমা সামরিক সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই যথেষ্ট নয়।’
সাক্ষাৎকারটি হয় কিয়েভের মারিয়িনস্কি প্রাসাদে, যেখানে রুশ হামলার কারণে অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ চলে যায়। জেলেনস্কি হেসে বলেন, ‘এই তো আমাদের জীবনযাপন। কিয়েভেও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ওঠানামা করে, অন্য জায়গার মতোই।’
তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া ইউরোপের বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালাচ্ছে এবং সতর্ক করেন যে ইউক্রেনে যুদ্ধ চলার মধ্যেই মস্কো অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধেও নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে।
জেলেনস্কি পুনরায় দাবি করেন, দোনেৎস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সাম্প্রতিক আক্রমণ, বিশেষ করে পোকরোভস্কে অভিযানে, তারা কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য পায়নি। তার ভাষায়, ‘বাস্তব অগ্রগতির দিক থেকে পুতিন এখন এক অচলাবস্থায়।’
সাম্প্রতিক রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎব্যবস্থা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পশ্চিম ইউক্রেনের দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও এতে ক্ষতির মুখে পড়ে। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থা সেন্ট্রেনেরগো জানায়, এই হামলার পর তাদের উৎপাদন ‘শূন্যে নেমে এসেছে’।