
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) ছড়িয়ে পড়ছে ‘ক্যান্ডিডা অরিস’ নামের এক ধরনের সম্ভাব্য প্রাণঘাতী ছত্রাক (ফাঙ্গাস)।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) যৌথ গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটির অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। একাধিক অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় ছত্রাকটিকে ২০১৯ সালে ‘অতি জরুরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স হুমকি’ হিসেবে ঘোষণা করে সিডিসি।
২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার একটি সরকারি ও একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি থাকা ৩৭৪টি নবজাতকের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা গেছে, ৩২ নবজাতক (৯ শতাংশ) ত্বকে ক্যান্ডিডা অরিস বহন করছিল। একজনের রক্তেও সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জন ভর্তি হওয়ার আগেই সংক্রমিত ছিল, আর ১৮ জন ভর্তি হওয়ার পর সংক্রমিত হয়। মোট সাতজন নবজাতকের মৃত্যু ঘটে, যার মধ্যে একজনের রক্তে সংক্রমণ প্রবেশ করেছিল। গবেষকেরা বলছেন, এসব তথ্য এনআইসিইউর ভেতরেই সংক্রমণ ঘটার ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সংগৃহীত ছত্রাকের ৮২ শতাংশই ফ্লুকোনাজোল নামের সাধারণ অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের প্রতি প্রতিরোধী। ফলে এই ওষুধে সংক্রমণ নিরাময়ের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। অথচ ক্যান্ডিডা অরিসের বিরুদ্ধে ফ্লুকোনাজোলই সাধারণত প্রথম সারির চিকিৎসা।
আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী ও সংক্রামক রোগ বিভাগের এএমআর গবেষণা শাখার প্রধান ফাহমিদা চৌধুরী বলেছেন, ‘এই গবেষণা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ বাচ্চাদের মধ্যে সুপারবাগ সংক্রমণের গুরুতর প্রমাণ দিয়েছে। প্রশাসনিক ও নীতিগতভাবে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার গবেষণাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রথম ধাপ।’
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সংক্রমিত নবজাতকদের ৮১ শতাংশের জন্ম হয়েছে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে। গবেষকেরা বলছেন, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া নবজাতক তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্যান্ডিডা অরিস এমন এক ধরনের ছত্রাক, যা কোনো লক্ষণ ছাড়াই ত্বকে দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে। প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে এই অবস্থান রক্তে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়, যা মারাত্মক প্রাণঘাতী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে এ সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুহার প্রায় ৭০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্যান্ডিডা অরিস ‘সুপারবাগ’-এ পরিণত হচ্ছে, অর্থাৎ এটি একাধিক ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এর ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। গবেষকেরা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ব্যবহার্য সামগ্রী ক্লোরিনভিত্তিক জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, স্বাস্থ্যকর্মীদের হাত ধোয়ার অভ্যাস জোরদার করা এবং এনআইসিইউতে ছত্রাক সংক্রমণের ওপর ধারাবাহিক নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এতে আক্রান্ত নবজাতকদের দ্রুত শনাক্ত ও আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।