
আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। তার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সাত জন স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে আবারও নতুন করে বিচার শুরু হচ্ছে আগামী মার্চে। বুধবার এই ঘোষণা দিয়েছে বুয়েনস এইরেসের উপকণ্ঠে অবস্থিত সান ইসিদ্রো আদালত। গত মে মাসে এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত হয়েছিল। কারণ তিন সদস্যের বিচারক প্যানেলের একজন, জুলিয়েতা মাকিনতাচ, সেখান থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। মামলাটি নিয়ে নির্মিত এক তথ্যচিত্রে অংশ নেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। সেই বিতর্কের জেরে মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করে আদালত।
তবে এখানেই শেষ নয়। বিচারক মার্কিনতাচ নিজেও এখন আদালতের মুখোমুখি হচ্ছেন। গতকাল বুয়েনস এইরেস প্রদেশের রাজধানী লা প্লাতা শহরে তার বিরুদ্ধে নতুন বিচার শুরু হয়েছে। অভিযোগ- বিচারকের দায়িত্ব পালনে অনিয়ম করেছেন তিনি। এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে তাকে পদচ্যুতও করা হতে পারে।
২০২০ সালের নভেম্বরে মারা যান ম্যারাডোনা। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৬০ বছর। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, মৃত্যুর আগের কয়েক সপ্তাহে তার চিকিৎসা দল যথাযথ সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোলদো লুকে রয়েছেন অভিযুক্তদের তালিকায়। সঙ্গে আছেন একজন মনোবিজ্ঞানী, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ও দুই জন নার্স। তাদের বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অপরাধে অভিযুক্তরা সচেতনভাবেই ঝুঁকির কথা জানতেন। এরপরেও তারা সেটি উপেক্ষা করেছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।
অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। অবশ্য সব অভিযুক্তই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তারা সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধ নিয়েই ম্যারাডোনার চিকিৎসা করেছেন। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে একক হাতে শিরোপা এনে দেন ম্যারাডোনা। নেপলসের বস্তি থেকে উঠে এসে বিশ্বের শীর্ষ তারকা হয়ে ওঠা এই ফুটবল জাদুকরের জীবনের গল্প পুরো আর্জেন্টিনার জনগণের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে আছে। তার মৃত্যু তাই শুধু একজন কিংবদন্তির ইতি নয়। বরং পুরো জাতির একটি আবেগময় ইতিহাসের সমাপ্তি।
আর্জেন্টিনাবাসী তাই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মামলাটির প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করছে। তাদের কাছে ম্যারাডোনা কেবল একজন ফুটবলার নন। তিনি তাদের জাতীয় নায়ক। আগামী মার্চে যখন মামলাটির বিচার নতুন করে শুরু হবে, তখন সবাই আবারও সেই উত্তর খুঁজবেন। ম্যারাডোনা মৃত্যু কি কেবল ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিণতি, না কি চিকিৎসা অবহেলার ফল? আসল সত্যটা কী ছিল তা বিচারের রায়েই বেরিয়ে আসবে। কিন্তু কোটি ভক্তের হৃদয়ে ম্যারাডোনা আজও অমর। ফুটবল মাঠের প্রতিটি বাকে এখনো বাজে তার নাম- ‘ডিয়েগো! ডিয়েগো!’