
আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে আট দফা সুপারিশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।
বুধবার (৫ নভেম্বর) ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইআরআইয়ের এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে প্রাক্-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। বিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাস এখনো রয়ে গেছে।
জনগণের আস্থা বজায় রাখতে ধারাবাহিক সংলাপ ও রাজনৈতিক–নাগরিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আইআরআইয়ের প্রাক্-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশনের সদস্যরা। তারা ২১টি বৈঠকে মোট ৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে আলোচনা করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান, প্রবাসী ভোটারদের আগ্রহ এবং প্রথমবারের মতো বিপুলসংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার অভাব, নারীর সীমিত অংশগ্রহণ এবং উগ্রপন্থী আন্দোলনের প্রতি বাড়তি আগ্রহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
আইআরআই বলেছে, জুলাই জাতীয় সনদ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের একটি নীলনকশা হতে পারে, তবে এর সফলতা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের ওপর।
আইআরআইয়ের আট দফা সুপারিশ
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন: রাজনৈতিক দলগুলোকে সময়সীমা নির্ধারণ ও বিতর্কিত বিষয় সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
গণভোটে স্বচ্ছতা: অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে গণভোটের আইনি কাঠামো ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে হবে।
নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণের বোঝাপড়া নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে নাগরিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে হবে, বিশেষত তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।
নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: নারী নেতৃত্ব বিকাশ, প্রার্থী মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা: রাজনৈতিক দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে হবে।
নিরাপত্তা পরিকল্পনার সমন্বয়: নির্বাচন কমিশনকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।
নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে স্বচ্ছতা: পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতির মানদণ্ড স্পষ্ট করতে হবে এবং তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক অর্থায়নে জবাবদিহি: রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে নাগরিক সমাজ তা যাচাই করতে পারে।
আইআরআই জোর দিয়েছে, গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা রাজনৈতিক বা আর্থিক চাপ ছাড়াই তথ্য প্রচার করতে পারেন।