
টাইফুন কালমেগির আঘাত ও প্রবল বৃষ্টিপাত-বন্যায় ফিলিপাইনের মধ্যাঞ্চলে অন্তত ২৬ জনের প্রাণ গিয়েছে। ফিলিপাইনের সিভিল ডিফেন্স অফিস (ওসিডি) এই তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার মধ্যরাতে দেশটির মধ্যাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় টাইফুন কালমেগি আঘাত হানে। এতে অসংখ্য মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ওই এলাকার বাসিন্দারা ছাদে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তায় গাড়ি ভাসতে দেখা গেছে।
টাইফুনের কবল থেকে বাঁচাতে কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শক্তিশালী ঝড়টি ভিসায়াস দ্বীপপুঞ্জের পাশাপাশি অন্য দুটি দ্বীপপুঞ্জ লুজন এবং মিন্দানাওতেও আঘাত করেছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর নাগাদ কালমেগি সেবু, নেগ্রোস এবং পানে দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। তখন ঘণ্টায় ১৫০ কিমি (৯৩ মাইল) থেকে ১৮৫ কিমি/ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল। এতে গাছপালা উপড়ে পড়েছিল এবং বিদ্যুতের লাইন ভেঙে পড়েছিল।
ওসিডির উপ-প্রশাসক রাফায়েলিতো আলেজান্দ্রো বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, কেবল সেবুতেই এখন পর্যন্ত ২১ জনের প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, টাইফুনের প্রভাবে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। বেশিরভাগ মানুষই পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে প্রাদেশিক গভর্নর পামেলা বারিকুয়াত্রো বলেছেন, সেবুর পরিস্থিতি সত্যিই নজিরবিহীন। আমরা ভেবেছিলাম প্রবল বাতাসই বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তু… প্রকৃত ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পানি। বন্যার পানিতে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় দুর্যোগ কর্মকর্তা এথেল মিনোজা বলেছেন, সেবু সিটিতে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং উদ্ধারকর্মীরা এখনও পানিবন্দি মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
সেবু সিটির ২৮ বছর বয়সী বাসিন্দা ডন ডেল রোসারিও বলেন, ‘ঝড়ের সময় তিনি অন্যদের সঙ্গে একটি ভবনের ওপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি খুব দ্রুত উঠছিল। ভোর ৪টার মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছিল না। আমি এখানে ২৮ বছর ধরে আছি। এর চেয়ে ভয়াবহ কিছু কখনও দেখিনি।’
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই ঘূর্ণিঝড় ও টাইফুন ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। উষ্ণ মহাসাগর টাইফুনকে দ্রুত তীব্র করে তুলছে। আর উষ্ণ বায়ুমণ্ডলের কারণে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারী বৃষ্টিপাতও ঘনঘন দেখা দিচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা আলেজান্দ্রো বলেন, ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথ থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে আগাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ত্রাণ তৎপরতায় সহায়তা করার সময় মঙ্গলবার বিকেলের দিকে একটি উড়োজাহাজ উত্তর মিন্দানাও দ্বীপে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিপাইনের সেনাবাহিনী।
এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, প্রবল ঝড়ের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে গিয়ে উপকূলীয় শহর বুতুয়ানের পথে থাকা সুপার হিউই উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কেউ জীবিত আছেন কি না, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
সূত্র: এএফপি, আল জাজিরা