
পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের (পিআইএ) ব্যবস্থাপনা ও বিমানের প্রকৌশলীদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বে দেশজুড়ে ফ্লাইট কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। বিমানের ‘এয়ারওয়র্থিনেস’ ক্লিয়ারেন্স বন্ধ থাকায় হাজারো যাত্রী আটকা পড়েছেন বিভিন্ন বিমানবন্দরে।
সূত্র জানায়, সোমবার রাত ৮টার পর থেকে পিআইএ-এর একটিও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট উড্ডয়ন করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৫টি ফ্লাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫টি বাতিল এবং ১২টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যাত্রী ওমরাহযাত্রী।
করাচি-স্কার্দু দুটি ফ্লাইট ও লাহোর-করাচি একটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এছাড়া লাহোর-মাসকাটের পিকে-৩২৯ ও পিকে-৩৩০ ফ্লাইটও বাতিল হয়েছে। করাচি-লাহোর ফ্লাইট পিকে-৩০২ বিলম্বিত হয়েছে ১৪ ঘণ্টারও বেশি সময়, আর করাচি-ইসলামাবাদের প্রথম ফ্লাইট পিকে-৩০০ নির্ধারিত সময়ে উড্ডয়ন করতে পারেনি। ইসলামাবাদ-গিলগিট ফ্লাইট পিকে-৬০১ ও পিকে-৬০২-ও পরিচালিত হয়নি।
‘সোসাইটি অব এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার্স অব পাকিস্তান’ (SAEP) জানিয়েছে, ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তারা কাজ করবেন না। সংগঠনটির দাবি, তারা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে কালো ব্যাজ পরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাচ্ছেন, কিন্তু প্রশাসন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসেনি।
তারা অভিযোগ করেন, গত আট বছর ধরে কোনো বেতন বৃদ্ধি হয়নি, একই সঙ্গে স্পেয়ার পার্টসের ঘাটতির কারণে তাদের ওপর নিয়মবহির্ভূতভাবে বিমান উড্ডয়নের চাপ দেওয়া হচ্ছে। “আমরা যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারি না,” বলেন এক প্রকৌশলী।
পিআইএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ফ্লাইট ব্যাহত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পিআইএ’র মুখপাত্র দাবি করেন, প্রকৌশলীদের সংগঠনটির কোনো আইনি বৈধতা নেই এবং এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো এয়ারলাইন্সটির বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া ব্যাহত করা। তার মতে, এটি একটি পরিকল্পিত কর্মবিরতি, যা যাত্রীদের অযথা দুর্ভোগে ফেলছে।
সিইও আরও বলেন, “পাকিস্তান এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (মেইনটেন্যান্স) অ্যাক্ট, ১৯৫২ অনুযায়ী পিআইএ-তে ধর্মঘট বা কর্মবিরতি বেআইনি। যারা এতে যুক্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পিআইএ প্রশাসন জানিয়েছে, তারা অন্য এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে প্রকৌশল সহায়তা নিচ্ছে এবং দ্রুতই ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।