
তিন দশক ধরে ব্লুটুথ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নীরব সঙ্গী হয়ে আছে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ওয়্যারলেস হেডফোন, স্মার্টওয়াচ অথবা হৃদরোগজনিত ডিভাইস—সবখানেই তারহীন এই সংযোগ ব্যবস্থার উপস্থিতি অপরিহার্য। তবে এই স্বাচ্ছন্দ্যের আড়ালে রয়েছে কিছু অদৃশ্য ও উপেক্ষিত ঝুঁকি, যা অনেক ব্যবহারকারী সচেতন নয়।
ব্লুটুথ প্রতিনিয়ত পেছনে থেকে ডেটা আদান-প্রদান করে, ফাইল ট্রান্সফার থেকে শুরু করে অডিও স্ট্রিমিং—সবই এটি করে দেয় নিরবভবে। কিন্তু সবসময় ব্লুটুথ চালু রাখা মানে একই সঙ্গে ডিভাইসকে সম্ভাব্য হ্যাকারদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া। আধুনিক এনক্রিপশনের মাঝেও ব্লুটুথ পুরোপুরি নিরাপদ নয়; ব্লুস্নার্ফিং ও ব্লুজ্যাকিং-এর মতো আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত নয় প্রযুক্তিটি।
ব্লুস্নার্ফিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করে অপরিচিতরা মোবাইল ফোন কিংবা ডিভাইসের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে—যেমন কনট্যাক্ট লিস্ট, কল লগ বা সংরক্ষিত ফাইল। আর ব্লুজ্যাকিংয়ে অননুমোদিত ডিভাইস থেকে ফোনে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ বা বিজ্ঞাপন পাঠানো সম্ভব। একবার অবৈধ সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে হ্যাকাররা ব্যাংকিং তথ্য, পাসওয়ার্ড কিংবা লোকেশন পর্যন্ত চুরি করতে পারে।
এ ধরনের ঝুঁকি শুধু স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে সীমাবদ্ধ নেই। ব্লুটুথ এখন পেসমেকার, ইনফিউশন পাম্প, ফিটনেস ব্যান্ডসহ নানা স্বাস্থ্যসেবা যন্ত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও এসব ছোট ডিভাইস হ্যাকিংয়ে প্রযুক্তিগত জটিলতা বেশি থাকে, তবুও কোনো অনিষ্ট মনোভাব থাকলে ব্লুটুথের মাধ্যমে এগুলোতে বাধা দেয়া বা বিপদ সৃষ্টি করা সম্ভব।
আরও একটি আশঙ্কার বিষয়: বড় খুচরা বিক্রেতারা ব্লুটুথ বিকন (beacon) ব্যবহার করে গ্রাহকদের অবস্থান, পছন্দ ও কেনাকাটার ধরণ বিশ্লেষণ করে—যা ব্যক্তিগত লাইফস্টাইল এবং প্রাইভেসির ওপর প্রশ্ন তুলে দেয়।
সেই কারণে নিরাপত্তা–সচেতনতা এখন অপরিহার্য। নিচে কিছু প্রাথমিক কিন্তু কার্যকরী নিরাপত্তা পরামর্শ দেওয়া হলো—যা অনুসরণ করলে ঝুঁকি খুবই কমানো সম্ভব:
- ‘উন্মুক্ত স্থানে ব্লুটুথ বন্ধ রাখুন’—ভিড় বা অচেনা জায়গায় ব্লুটুথ চালু রেখে দেবেন না।
- ‘অটো রিকানেক্ট বন্ধ করুন’—ডিভাইস যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অজানা ডিভাইসের সঙ্গে জোড়া তৈরি না করে।
- ‘অচেনা পেয়ারিং রিকোয়েস্ট প্রত্যাখ্যান করুন’—হঠাৎ কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পেয়ারিং আসলে তা বাতিল করে দিন।
- ‘সফটওয়্যার আপডেট রাখুন’—পুরনো সংস্করণ থেকে ‘ব্লুবোর্ন’ ধরনের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে; তাই ডিভাইস ও অ্যাপস নিয়মিত আপডেট করুন।
- ‘অ্যাপ পারমিশন রিভিউ করুন’—কোনো অ্যাপ কী ধরনের ব্লুটুথ/লোকেশন/কনট্যাক্টস অ্যাক্সেস চাইছে, তা নিয়মিত যাচাই করুন।
- ‘ভিপিএন ব্যবহার করুন’—নেটওয়ার্ক স্তরে নিরাপত্তা বাড়াতে ভিপিএন ব্যবহার উপকারী।
ব্লুটুথ দিনদিন সুবিধাজনক হলেও ব্যবহারবিধিতে সচেতনতা না থাকলে তা বড় সাইবারঝুঁকিতে ভাঁজ দেয়। তাই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা অভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ।